মুজিব বর্ষের ঘরে বদলে গেছে সোহেল-স্বপ্নার ভাগ্য
কিছু দিন আগেও ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। এখন রঙিন টিন আর আধা পাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। বাড়িতেই শাক-সবজি চাষ করছেন। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী।
সরেজমিনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু ভিলেজ আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে ছিন্নমূল মানুষের জীবনের। তারা এখন রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের বাড়িতে বসবাস করছেন। সেই বাড়িতেই শাক-সবজির আবাদ করছেন। কেউ পালন করছেন হাঁস-মুরগি-ছাগল-গরু। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। সংসারে ফিরে আসছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের কেগনা নামক স্থানে প্রায় ১০ একর জমিতে ২৭০ জন আশ্রয়হীন পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভিলেজ। যার পুরো জায়গাটি ছিল সরকারি খাস জমি। স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিমের সহযোগিতায় জমিগুলো উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন।
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছেন স্বপ্না আক্তার (৩০)। নিজের ঘরের চারপাশে রোপণ করেছেন শাক-সবজি। স্বপ্না আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখানে এসেছি এক বছর হলো। ঘরের পাশেই সবজি উৎপাদন করছি। পেঁপে, লাউ, শিম, বেগুনগাছ রোপণ করেছি। পাশাপাশি পেয়ারাগাছও রোপণ করেছি। আমার এখন কোনো কিছু বাজার থেকে কিনতে হয় না।
মোহাম্মদ সোহেল (৪০) নামে আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ভূমিহীন ছিলাম। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে চলত। ঘরের জন্য আবেদন করলে একটি ঘর আমি পাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তাই আমি নিজেই এখানে হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু-ছাগল লালন-পালন করছি। এতে করে আমার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বামী গৃহহীন হওয়ায় বাবা-মা হারা রোকেয়া বেগমের (৩৫) ঠাঁই হয়েছিল নানাবাড়িতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করে ভাগ্য বদলে গেছে তারও। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা-মা নেই। কেউ দেখার ছিল না। নানার বাড়িতে অন্যের জায়গায় থাকতাম। এখন নিজের ঘরেই আছি। স্বামী ভাড়ায় অটোরিকশা চালায়। আমি টুকটাক কাজ করি। এতেই আমাদের সংসার চলে।
রোকেয়া বেগমের স্বামী অটোরিকশা চালক আবদুল হাই (৪৫) ঢাকা পোস্টকে বলেন, অটোরিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০ টাকা বা তার বেশি আয় হয়। সেখান থেকে ৩০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দেওয়া লাগে। বাকি যা থাকে তা দিয়েই সংসার চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আলহামদুলিল্লাহ আগের থেকে অনেক ভালো আছি।
গৃহহীন আমেনা বেগম (৩৮) থাকতেন চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অন্যের জায়গায়। সেখানে স্বামী সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে পাহাড়ের উপর থাকতাম। অনেক কষ্টে দিন কাটাইছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর ঘরে অনেক ভালো আছি। আমার আর কিছু বলার নেই। খুব শান্তিতে আছি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
সাবেক শিক্ষক আমিনুল ইসলাম (৪৫) দীর্ঘ দিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের সব সম্বল বিক্রি করে গৃহহীন হয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার অসুস্থতার কারণে জায়গা-জমি বিক্রি করতে করতে ভূমিহীন হয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার সহযোগিতায় আশ্রয়ণের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে। এখন আমি ভালো আছি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন-চার স্তর যাচাই-বাছাই করে গৃহহীনদের মুজিববর্ষের ঘর দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করতেন। এখন তাদের পরিচয় মিলেছে। পাশাপাশি তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। প্রতিনিয়ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তারপরও যা যা প্রয়োজন তা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা বলেছেন, কেউ ভূমিহীন থাকবে না। আমরা সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমের সহযোগিতায় ১০ একর খাস জায়গা উদ্ধার করে এসব ঘর নির্মাণ করেছি। ইতোমধ্যে দুইশের বেশি ঘর মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন তার তদারকি করছেন।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবন-মান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে, আমরা সরকারে পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছি। নোয়াখালীতে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন বেশ কয়েকটি স্থানে শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির তৈরি করছি। এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং ঋণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জায়গাটি বেদখল ছিল। আমি নিজে জায়গাটি উদ্ধার করেছি। এখানকার পরিবারগুলোর জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গৃহহীন এসব মানুষের গৃহের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছিল সব থেকে চ্যালেঞ্জিং। ইতোমধ্যে কেউ কৃষিকাজ করছে, জুতা বানাচ্ছে, তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। আমি সব সময় এই পরিবারগুলোর পাশে আছি।
হাসিব আল আমিন/এসপি