বুথে উঁকি দিয়ে ভোট দেওয়া দেখলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে
বিএনপির ছেড়ে দেওয়া পাঁচটি আসনের উপ-নির্বাচনে বাজেট স্বল্পতায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। তবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইভিএম, সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে এ ধরনের কোনো সংশয় নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও রংপুর সিটি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নিয়ে মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে সকল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ভোটকক্ষে এবং বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। আমরা ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে কেন্দ্র থেকে ফলাফল রিটার্নিং অফিসে নিয়ে আসব। এই বিষয়গুলো প্রার্থী এবং তাদের এজেন্টরা যাতে ভোটকক্ষে যান এবং যথার্থভাবে আচরণ করে, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা চাই। এটি সম্ভব হলে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে ২২৯টি কেন্দ্রের ১৩৪৯টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্র এবং কক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিং করা হবে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রংপুর এবং ঢাকা থেকে পুরো নির্বাচনের চিত্র দেখা হবে। ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ কমিশনারসহ ১৩ জনের একটি টিম সিসিটিভি ক্যামেরায় সার্বিক পরিস্থিতি দেখবেন। আমরা রংপুর এবং ঢাকা থেকে মনিটরিং করা অবস্থায় কোনো ধরনের অনিয়ম, বাধা, হস্তক্ষেপ বা কাউকে বলপ্রয়োগের চেষ্টা করতে দেখলে কোনোভাবেই তাকে ছাড় দেব না। প্রয়োজনে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার পাশাপাশি জড়িতদের ব্যাপারেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রার্থী এবং ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে। আমরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদেরকেও বলে দিয়েছি ভোটকক্ষে ভোটার ছাড়া অন্যকারও প্রবেশ করার সুযোগ নেই। এমনকি যিনি ভোট দেবেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ উঁকি দিয়ে দেখতেও পাবেন না। কারণ নির্বাচনের পুরো চিত্রটাই সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যাবে। যদি কেউ উঁকি দিয়ে দেখতে চায় ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছে, সেই চিত্র কিন্তু আমরাও দেখতে পাবো। তখন ওই উঁকি দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব এবং প্রয়োজনে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেব।
আবদুল বাতেন বলেন, মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা, একজনের ভোট অন্যজন দেওয়া বা ভোটকক্ষের বুথে একজনের সঙ্গে আরেকজন যাওয়া, এসব করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কেউ যদি নিয়ম ভেঙে পরিবেশের বিঘ্ন ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাধারণ ভোটারদের ইভিএমে ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে রংপুর সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট প্রদান পদ্ধতির প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ও লিফলেট বিলির মাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়েও ইভিএম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন এই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর আগে সকাল দশটায় পোলিং এজেন্টদের নিয়ে শুরু হয় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ। এতে নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি ইভিএম, সিসিটিভি ক্যামেরা, ট্যাব ব্যবহার এবং ভোটার শনাক্তকরণ বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মনিটরিং টিম ছাড়াও একজন মেয়র প্রার্থীর ১০ জন এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের একজন করে পোলিং এজেন্ট দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
এছাড়াও ইতোমধ্যে ইভিএম কোয়ালিটি চেকিং (কিউসি) কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বর্তমানে রংপুর সরকারি কলেজ ও লালকুটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরে এই প্রশিক্ষণ শেষ হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সিটিতে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এবার মেয়র পদে ৯ জনসহ সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৭ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস