বরফজলে চলে জীবিকার লড়াই
সকাল হলেই নেমে পড়েন বরফজলে। সন্ধ্যা নাগাদ চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। দিন শেষে সেই পাথর বিক্রি করে জুটছে পরিবারের মুখের আহার। এভাবে চলছে প্রতিদিনের জীবিকা অর্জন। এ চিত্র উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শালবাহান বালাবাড়ির ডাহুক নদীর পাথরশ্রমিকদের।
নদীতে গিয়ে দেখা যায়, দলবেঁধে নদীতে পাথর তুলছেন শ্রমিকরা। পানি বরফের মতো ঠান্ডা। এ পানিতে কয়েক মিনিট পর পর পানকৌড়ি পাখির মতো ডুব দিচ্ছেন দুই যুবক। তারা হলেন সামসুল ও আনোয়ার। একজন দাঁড়িয়ে থাকেন, অন্যজন ডুব দিয়ে নেট দিয়ে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেন। পরে পাড়ে থাকা সাত/আটজন তা টেনে নিয়ে আসেন। এভাবেই প্রতিবারে টানতে টানতে জমা হতে থাকে পাথর। সে পাথর তীরে এনে স্তূপ করেন কয়েকজন। এভাবেই শতাধিক শ্রমিক পাথর তুলে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, একটা সময় নদীতে পাথরের রাজত্ব ছিল। ড্রেজার মেশিনে তোলা হতো টন-টন পাথর। পাথর বিক্রি হতো দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে উত্তোলন করে এক শ্রেণি সুবিধাবাদী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছিলেন। তবে জেলায় সাবেক পুলিশ সুপার মুহম্মদ ইউসুফ আলী যোগদানের পর বন্ধ হয়ে যায় ধ্বংসাত্মক ড্রেজার মেশিনে পাথর উত্তোলন। এরপর থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
কথা হয় পাথরশ্রমিক আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল সকাল নদীতে নেমে পড়ি। ঠান্ডা পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলি। সারা দিন পাথর তুলে মহাজনের কাছে বিক্রি করে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। কোনো দিন আরও কম হয়। এ টাকায় সংসার চলছে না। তারপরও চালাতে হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন, জহিরুল ইসলাম ও এনামুলসহ কয়েকজন জানান, আমাদের কারও কারও পরিবারে সদস্য ৫-৭ জন। আমরা ১৬ জন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরফ পানিতে ডুবে ডুবে পাথর তুলে ৩০০-৪০০ টাকা মজুরি পাই। এ টাকায় সংসার চলছে না। আর অন্য কোনো কাজও নেই যে করব। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।
এসকে দোয়েল/এসপি