একটা সময় পটুয়াখালীর গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে খেজুরগাছের দেখা মিলত। খেজুর রসের পায়েস আর পিঠার গন্ধে ম ম করতো পুরো গ্রাম। শীতের সকালে রসের হাঁড়ি নিয়ে গাছিরাও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। তবে এখন আর সেই দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। 

তবুও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কিছু গাছি খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন। কিন্তু তাদের দিন কাটে নানা শঙ্কায়।গাছিদের অভিযোগ, শহর থেকে অনেক সময় অনেকে রস খেতে গ্রামে আসেন। তারা রস না পেয়ে হাড়ি ভেঙে ফেলেন। আবার অনেক সময় রসের মধ্যে নেশার ট্যাবলেট মিশিয়ে রেখে যান।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার শিয়ালী গ্রামের গাছি নুরুন নবী নিরু বলেন, আগের মতো আর খেজুরগাছ নেই। যে কটা গাছ আছে, তাও আমরা অনেক পরিশ্রম করে কেটে থাকি। কিন্তু আগের মতো রস পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, তাও আবার চোরে নিয়ে যায়। রাত্রে আমাদের রস চুরি করে লোকজন পিকনিক করে।

শিয়ালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ও গাছি আব্দুর রহমান বলেন, অনেক কষ্ট করে খেজুরগাছ কেটে থাকি। রাস্তার পাশে গাছ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে না বলে রস খেয়ে যায়। আবার অনেক সময় হাড়ি নিয়ে চলে যায়। তখন তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করে হাড়ি রেখে দেই।

খলিশাখালী গ্রামের গাছি জলিল ঘরামি বলেন, এখন রস বেশি হয় না। যতটুকু হয় তাও রাখতে পারি না। মানুষ খেয়ে ফেলে। এজন্য সারা রাত ধরে পাহারা দেই। তারপর ছোট এক কলসের মতো হয়। ৫০০ টাকায় বিক্রি করি।

তিনি আরও বলেন, খেজুরগাছের সঙ্গে এখন আর মাটির হাড়ি দেই না। রস চুরি করতে এসে রস নিয়ে যায় আবার হাড়ি ভেঙে ফেলে। তারপর যদি এই রস নিয়ে তর্কবিতর্ক করি, তাহলে রসের হাঁড়ির ভেতরে নেশার ট্যাবলেট দিয়ে যায়। নেশার ট্যাবলেট খাইয়া জনগণও মরবে, আমিও মরব।

সাংস্কৃতিক সংগঠক কবি গাজী হানিফ বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য খেজুরগাছ। আমরা ছোটবেলায় খেজুরের রস অনেক খেতাম। খেজুর রসের পিঠা ও পায়েস ঘরে ঘরে তৈরি হতো। কিন্তু এখন রস খুব কম দেখা যায়। আবার টাকা  দিয়েও অনেক সময় পাওয়া যায় না।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এসপি