বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের মেয়ে রেনু বেগম মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রেনু বেগম বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম চৌধুরীর স্ত্রী এবং ২ নম্বর সেক্টরের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের মেয়ে। এ ঘটনায় হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবার।

অভিযুক্ত চিকিৎসক হলেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মুশফিকুজ্জামান। তিনি দাবি করেন, দায়িত্ব পালনে কোনো প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেননি তিনি। তারপরও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় হতবাক হয়েছেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। চলতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রোগীর ছেলে আরাফাত চৌধুরী বলেন, মা ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট গুরুতর অসুস্থ হলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ওখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এম.এ সালেহউদ্দিন আহম্মেদ আমাদের জানান, রোগীকে আরও দুই দিন পর্যবেক্ষণের পরে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ১০টার দিকে এসে কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মুশফিকুজ্জামান মাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। তখন আমরা তাকে বিভাগীয় প্রধানের দুই দিন পর্যবেক্ষণের কথা বললে তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। আমাকে ও আমার বোনকে মারধর করতেও উদ্যত হন।

তিনি বলেন, আমরা তখন বাসায় চলে আসতে বাধ্য হই। এরপর আরও তিনবার অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মা যখনই ডা. মুশফিকুজ্জামানের সামনে পড়েছেন, তখনই তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর মা ভর্তি হন। ডা. মুশফিকুজ্জামান মাকে দেখে ১৯ তারিখ ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। আবার ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ভর্তি হন। এরপর ডা. মুশফিকুজ্জামানের সামনে পড়েন এবং তিনি ২৫ আগস্ট ছাড়পত্র দিয়ে দেন। যেদিন আমার মা মারা যান তার আগের দিনও তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়।

রোগীর ওই স্বজন বলেন, ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা হাসপাতালে নিলে ডা. মুশফিকুজ্জামান ছাড়পত্র দিয়ে দেন। কিছু পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসতে বলেন। সেই রিপোর্টও দেখেন না। মায়ের অবস্থা তখন খুবই খারাপ ছিল। শেষে উপায় না পেয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক না পেয়ে পুনরায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করি। আমার মা ২৯ নভেম্বর সেখানে মারা যান।

তিনি আরও বলেন, ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে তর্কাতর্কির সূত্র ধরে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আমার মাকে সঠিক চিকিৎসা দেয়নি হাসপাতাল। এমনকি উপায় না পেয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাতি পরিচয় দেওয়ায় ডা. মুশফিকুজ্জামান ধমক দিয়ে বলেন, ওসব গল্প জনসভায় বলবেন।

রেনু বেগমের স্বামী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে ছেলেমেয়েদের সাথে তর্কাতর্কি হওয়ার পর যখন সঠিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন না ডা. মুশফিকুজ্জামান, তখন আমি তার কাছে হাত জোর করে ক্ষমাও চেয়েছি। আমাদের ভুল না হলেও ভুল বলে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তিনি বলেছেন, আমার মেয়ে এসে যদি তার পা ধরে মাফ চায়, তাহলে বিচেনা করে দেখবেন চিকিৎসা হাসপাতালে দেওয়া যায় কি না। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অভিযোগ দিলেও তারা টালবাহানা করছেন। ডাক্তারের অবহেলায় আমার রোগীর মৃত্যু হলেও তার কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ডা. মুশফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কার্ডিওলজলি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মুশফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। চিকিৎসা পেশায় কাউকে সুখী করা অনেক দুঃসাধ্য। হৃদরোগ বিভাগে তা আরও দুঃসাধ্য। রোগী মারা যাওয়ার পর অনেক অভিযোগ আসে, তবে আপনাদের (প্রতিবেদক) বুঝতে হবে এর সত্যতা কতটুকু? এ ঘটনায় আমার কাছেও জবাব চাওয়া হয়েছে। আমি জবাব দিয়েছি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে মেডিসিন বিভাগের ইউনিট-২ এর প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং মেডিসিন বিভাগের ইউনিট-৩ এর সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবদেন দাখিল করবেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মনে রাখা জরুরি জনগণের আয়করের টাকায় আমাদের বেতন হয়। সুতরাং হাসপাতালে আসা সকল রোগীর সঙ্গে সেবামূলক আচরণ করা উচিত।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি