১৭ বছরেও শেষ হয়নি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্মাণকাজ
সুনামগঞ্জের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কুরবাননগরে প্রায় দেড় যুগ আগে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হয়। দুই বছরেই নির্মাণ কাজ শেষ করে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও ১৭ বছর ধরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ দেখছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণগাঁও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তাহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটি। সামনের দরজায় নেই কোনো তালা। ভেঙে যাচ্ছে দরজা-জানালা। নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে ভবনের ভেতর। ভাঙা জানালা দিয়ে বাহির থেকে কয়েকটি চেয়ার আর বেঞ্চ দেখা যাচ্ছে। পেছনে গিয়ে দেখা যায় পানির জন্য টিউবওয়েল ও পাইপ টানা থাকলেও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। টিউবওয়েলে পানি উঠে না বলে জানান এলাকাবাসী। এভাবে পড়ে থাকলে দিন দিন শুধু সরকারি সম্পদের ক্ষতি হবে। একসময় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরিত্যক্ত হলে আর স্বাস্থ্যসেবার মুখ দেখা যাবে না। তাই দ্রুত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি চালু করে স্বাস্থ্যসেবায় আলোর মুখ দেখানোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
বিজ্ঞাপন
ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের হাবিবা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৭ বছর ধরে শুধু কাজই চলতেছে। কবে উদ্বোধন হবে কেউ জানে না। এখনো যদি উদ্বোধন করা হয় আমাদের কাজে আসবে। চিকিৎসার জন্য আমাদের সদরে যেতে হবে না।
আকলিমা বেগম নামে আরেকজন বলেন, কাজ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু কোনো মানুষ নেই, নিরাপত্তা নেই। তাই দরজা-জানালা সব ভেঙে যাচ্ছে। দ্রুত উদ্বোধন করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মোছা. জাহারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে কাঁদাপানি মাড়িয়ে সদর হাসপাতালে যেতে হয়। এছাড়া আসা-যাওয়ায় অনেক অর্থ খরচ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, দুই দিন পরপর অফিসাররা আসেন আর দেখে চলে যান। এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ১৭ বছর ধরে এই দৃশ্য চলছে। উদ্বোধন কবে হবে এই প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারেন না। এখন আমরা বিরক্ত হয়ে গেছি। এই ক্লিনিক উদ্বোধন হবার আশা আর করছি না।
এদিকে কোরবাননগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কাজ কবে শুরু হয়েছিল এর সঠিক তথ্য নেই সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে। এই প্রকল্পের কোনো ফাইলও এই দপ্তরে নেই। কর্মকর্তারা জানান, কাজ শুরুর সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো কার্যালয় সুনামগঞ্জে ছিল না। তখন সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এটি দেখভাল করা হতো।
কোরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০৫ সালে এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। কয়েকবার কাজ চালু ও বন্ধ হতে হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে। এরপর আবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে আবার কাজ শুরু হলেও কয়েক দিন কাজ হবার পর আবার বন্ধ হয়। এভাবে কমপক্ষে ৩০ বার কাজ চালু ও বন্ধ হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বরকত বলেন, প্রায় ১১ বছর ধরে আমি এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কাজ আমার প্রথম মেয়াদেরও আগে শুরু হয়েছে। এখনো যদি এটির উদ্বোধন হয় তাহলে ইউনিয়নের উত্তর-দক্ষিণ ব্রাহ্মণগাঁও, মনোহরপুর, আসপিয়ানগরসহ ২০-২৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের উপকারে আসবে এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র।
নির্মাণাধীন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উজ্জ্বল মিয়া বলেন, আমি সুনামগঞ্জে এসেছি তিন বছর আগে। আমি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নির্মাণ প্রকল্পের কোনো ফাইলপত্র পাইনি তবুও অনেক কাজ শেষ করেছি। এই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যও আমার কাছে নেই। এছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় তখনকার সময়ে ছিল ৮০ লাখ টাকা। এখন এটি সম্পন্ন করতে তিন কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হবে।
সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার শীল বলেন, এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখন হয় চাকরিতে নেই, না হয় পদোন্নতি পেয়ে অনেক উপরে চলে গেছেন। আমিও নতুন এসেছি, এখনকার বিষয় ছাড়া আগের কিছুই বলতে পারব না। এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ভবনের নিচতলায় পাঁচটি কক্ষ এবং ওপরতলায় দুটি কোয়ার্টার আছে। এই ভবনের কাজ প্রায় শেষ। গেল বন্যায় দরজা-জানালা নষ্ট হয়েছে। পানির জন্য সাবমারসিবল টিউবওয়েল বসিয়ে এবং দরজা জানালার কাজ করে আগামী মাসের মধ্যে এটি হস্তান্তর করার চেষ্টা করবো।
সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. ননী ভূষণ তালুকদার বলেন, সেবা কেন্দ্রটির ভবনের কাজ দীর্ঘদিন আগে শুরু হয়েছিল। বহুবার কাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ হয়েছে। পানি সরবরাহসহ কিছু ছোটখাটো কাজ এখনো বাকি। কেন্দ্রের লোকবল প্রস্তুত রয়েছে। এগুলো করে দিলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব।
এমজেইউ