দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রুদের গতিরোধ করার সময় হানাদার বাহিনীর গুলিতে বগুড়ায় প্রথম শহীদ হন রিক্সাচালক তোতা মিয়া। জেলায় প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়ার নাম সকলের মুখেমুখে থাকলেও যুদ্ধের ৫০ বছরেও তাকে দেওয়া হয়নি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

সরকারিভাবে তার কবরটিও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। শহীদ তোতা মিয়াকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সরকারিভাবে কবর সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে তার স্বজন এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে বগুড়ায় প্রথম শহীদ হন রিক্সাচালক তোতা মিয়া। বগুড়ার সদর উপজেলার ঠেঙ্গামারা এলাকায় তার বাড়ি। তার বাবা ছিলেন মৃত ভোলা মিয়া। সন্তান সম্ভবা স্ত্রী ঘরে রেখে তিনি ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। 

মুক্তিসেনারা জানায়, রংপুরের দিক থেকে পাক বাহিনী যখন বগুড়ার দিকে অগ্রসর হয় তখন তোতা মিয়া রাস্তায় গাছের কাঁটা ডাল ফেলে হানাদারদের পথ রোধ করে। এ সময় তিনি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তবে আজও কোনো মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তোতা মিয়ার নাম উচ্চারিত হয়নি। তোতা মিয়া শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তার দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে এখন শুধু ছোট বোন বেঁচে আছেন। সেই কারণে আপনজন বলে তোতা মিয়ার কেউ নেই। তার কবরস্থানটি দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে অবহেলায় পড়েছিল। সম্প্রতি বগুড়ার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ডক্টর হোসেনে আরা বেগম শহীদ তোতা মিয়ার কবরটি পাকা করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

নিশিন্দারা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত বছর থেকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ও উপহার শহীদ তোতা মিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও বোনের হাতে দিয়ে আসছি। তবে মুক্তিযোদ্ধের লাল বার্তা এবং গেজেটে তার নাম নেই।

বগুড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল মান্নান সরকার জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম মাসেই পাকিস্থানী শত্রুদের গতিরোধ করতে বাঘোপাড়া এলাকায় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে গাছের ডাল কেটে ব্যারিকেড দিচ্ছিলেন রিক্সাচালক তোতা মিয়া। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে পাক হানাদার বাহিনী সরাসরি গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তোতা মিয়া শহীদ হয় এবং বগুড়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধে সেই প্রথম শহীদ। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও শহীদ তোতা মিয়ার নাম কোনো গেজেট হয়নি।
 
বগুড়া আধিবাসী গবেষণা পরিষদ’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, শহীদ তোতা আজও অবহেলিত। তোতা মিয়ার মতো সম্মুখ যোদ্ধা অত্র এলাকায় অনেক কম আছে। এখন শহীদ তোতা মিয়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দরকার। দরকার তার ইতিহাস সংরক্ষণ ও স্মৃতি স্তম্ভ। 

শহীদ তোতা মিয়ার ছোট বোন আছিরন বেগম বলেন, বগুড়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম শহীদ হয়েছেন আমার বড় ভাই শহীদ তোতা মিয়া। তার সন্তানাদি নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও আমার ভাইয়ের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি মেলেনি। আমার ভাইয়ের নাম সরকারিভাবে শহীদের তালিকায় লেখা হোক এবং সেই সঙ্গে তার কবরটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পাল বলেন, শহীদ তোতা মিয়ার কবরস্থানের জায়গা বিক্রি হয়ে গেছে। গেজেটে তোতা মিয়ার নাম তা থাকলেও তার পরিবারকে আমরা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত এবং কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি। তার নাম গেজেটকৃত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আলমগীর হোসেন/আরকে