কুড়িগ্রামের একটি সরিষা ক্ষেত/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

কম সময় ও স্বল্প খরচের বিপরীতে লাভ বেশি হওয়ায় পতিত জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকেছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছেএবার। এতে কৃষকদের লাভের পাশাপাশি দেশে রান্নার তেলের ঘাটতি মিটবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। আমন উৎপাদনের পর তিন মাস পড়ে থাকা পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আসায় সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের উপযোগী। সেচ, সার ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষ করে এবার লাভের আশা করছেন কৃষকরা। 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৪ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। 

কৃষকরা জানান, জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। আমন কাটা, মাড়াইয়ের পর ৩-৪ মাস জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা উত্তোলন করে একই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন চাষিরা।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবস গ্রামের কৃষক দিলদার হোসেন বলেন, হামার এই এলাকা চর, বানোত (বন্যায়) ডুবি যাই। যা আবাদ করি বান (বন্যা) আসি খ্যায়া (নষ্ট হয়ে) যায়। আমন আবাদে বারে বারে মাইর (লোকসান) খাই। এজন্য এবার সরিষার আবাদ করছি। অল্প দিনের মধ্যে সরিষা ঘরে তুলব। এবার সরিষার আবাদও ভালো হইছে। সরিষা তুলি বোরো ধান লাগামো।

ওই এলাকার আরেক কৃষক বাবলু বলেন, আমাদের এখানকার জমিগুলোতে ৩-৪ মাস পর্যন্ত পানি থাকে। আমন আবাদ একদমই হয় না। শুধু বোরো ও সরিষা হয়। আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তেল ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি কুড়িগ্রাম জেলায়। গত বছর ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

জুয়েল রানা/এসপি/জেএস