তেল বরাদ্দ না থাকায় দেড় মাস ধরে হাসপাতালের দুই অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ
তেল বরাদ্দ না থাকায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরিব রোগীরা। তাদের এই হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতেও বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হচ্ছে। এতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।
১৯১৭ সালে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী মহল্লার মুজিব সড়কের পাশে স্থাপিত হয় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১২৫। ফরিদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। যেটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে পরিচিত। এই হাসপাতালটি শহর থেকে আনুমানিক সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে হাড়োকান্দি এলাকায় অবস্থিত।
বিজ্ঞাপন
শহরের রোগীরা প্রথম অবস্থায় শহরের মধ্যে অবস্থিত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এ হাসপাতালে যে সব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তাদের এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা আরিফ কাজী (২৭) বলেন, গতকাল বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) তার মামি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করেন। জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিতে চাইলে তাকে জানানো হয় তেল সংকটের কারণে সব কিছু ঠিক থাকলেও হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে তাকে ৫৫০ টাকা খরচ করে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। অথচ জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স পেলে তার এ কাজের জন্য ১০০ থেকে ১১০ টাকা খরচ হতো।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার জয়বাংলা এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমি আমার এক আত্মীয়কে নিয়ে এই হাসপাতালে এসেছিলাম। কয়েক দিন ভর্তি থাকার পর আজ সকালে বাড়ি যাব রোগীকে নিয়ে। অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে গিয়েছি- এমন সময় অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান গাড়িতে তেল নেই। বাধ্য হয়ে ১৫০০ টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি যেতে হচ্ছে। অথচ সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার বেশি লাগত না। তাছাড়া বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পেতেও সময় লাগে। এতে আমাদের দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রায় দ্বিগুণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হলো।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পশ্চিম পাশে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের কাছে চারটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গ্যারেজে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দুটি কলাপসিবল গেট টেনে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখা যায়- অনেক দিন খোলা হয় না গেট দুটি। ফলে মাকড়সায় জাল বুনেছে।
এই অ্যাম্বুলেন্স দুটির চালক হলেন- মোতাহার হোসেন (৫১) ও ইমারন হোসেন (৪২)। অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় তাদের হাসপাতালে কোনো কাজ নেই। তবে তারা প্রতিদিনই হাজিরা দেন হাসপাতালে।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা গণেশ কুমার আগরওয়ালা বলেন, তেল বরাদ্দ না পাওয়ার জন্য এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে পেট্রল পাম্প থেকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেওয়া হতো, সেই পেট্রল পাম্পে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে গত ১ নভেম্বর থেকে রোগীদের সেবায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারছি না। এটি দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, তেল কম বরাদ্দ পাওয়ায় আমাদের পক্ষে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তেল বাবদ আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। অথচ বর্তমানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭২ হাজার টাকা। বরাদ্দের টাকা বাড়বে ভেবে আমরা নির্ধারিত পেট্রল পাম্পে বুঝিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার তেল বাকিতে ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (অর্থ) দুই দফা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একবারসহ মোট তিনবার লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর পাইনি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।
জহির হোসেন/আরএআর