প্রতিবছর বর্ষায় চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে আতঙ্কে দিন কাটান চাঁদপুরের মেঘনা নদীর তীরের বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন বর্ষার সময়ে নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁধে ভাঙন কিংবা ফাটল দেখা দিলে জিও ব্যাগ, ব্লক ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকার কারণে ভাঙন ও ফাটলের স্থান ভালোভাবে নির্ণয় ও রোধ করা যায় না। তাই এই শীতে শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধটি শহরের নতুন বাজারের পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় ডাকাতিয়া নদী হয়ে নতুন লঞ্চঘাটের উত্তর পাশের এলাকায় মেঘনা নদীর পাড়ে মিলিত হয়েছে। এছাড়াও পুরানবাজার ব্রিজ থেকে শ্রীরামদী সাবেক কাউন্সিলর নুরু বকাউলের পর্যন্ত এর সীমানা। এর মধ্যে ২০১৯ সালে শহরের পুরান বাজার হরিসভা এলাকায় প্রথম ভাঙন দেখা দিলে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে কিছুটা রোধ করা হয়। গত বছরের ১২ আগস্ট ভোরে চাঁদপুরে শহরের টিলাবাড়ী এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ভাঙনে তলিয়ে যায় ৫৫ মিটার এলাকা। এর আগে পুরানবাজার রওনা গোয়াল ও হরিসভাসহ বেশকিছু এলাকার কয়েকশ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড় স্টেশন, টিলাবাড়ী, পুরান বাজারের হরিসভা মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের বসতঘরগুলো নদী থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে। যে কারণে বর্ষা সময়ের কথা চিন্তা করে রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।

পুরান বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা সমীর চন্দ্র ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহর রক্ষার বাঁধের সংস্কারের কাজ শীতের সময়ে করলে ভালো হয়। কারণ এই সময়ে বাঁধের ভাঙন ও ফাটল এলাকা চিহ্নিত করা যায়।

শহরের বাসিন্দা মো. সুজন মিজি বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় আমাদের মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। এই সময়ে জিও ব্যাগ, ব্লক ফেলে সাময়িক সময়ের জন্য ভাঙন কিছুটা রোধ করা হয়। তাই শীতের সময়ে ভাঙন ও ফাটল নির্ণয় করে স্থায়ী মেরামত করা প্রয়োজন।

হরিসভা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বাপ-দাদার বহু সম্পদ ছিল, সব নদী ভেঙে নিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন শহর রক্ষা বাঁধে যেন স্থায়ীভাবে কাজ করা হয়।

চাঁদপুর পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার জানান, চাঁদপুর শহর বাঁধটি বিভিন্ন সময়ে ভাঙনের কবলে পড়ে। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এখন শীতকাল, এই মুহূর্তে সংস্কার করা উচিত। ভাঙন ও ফাটলের অংশ চিহ্নিত করে সংস্কার করা হলে বাঁধ মজমুত হবে বলে মনে করি।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল বলেন, চাঁদপুর জেলা সবসময় নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকে। পদ্মা, মেঘনা এবং ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মোহনায় চাঁদপুর জেলা অবস্থিত। চাঁদপুর শহরকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ প্রকল্প নামে ৩ হাজার ৩৬০ মিটার প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বাজেট স্বল্পতার কারণে প্রতিরক্ষা কাজটি ঠিকমতো মেরামত না করায় বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা এগুলো মেরামত করার জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছি। যদি বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, র্দীঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ ও পুনর্বাসন নামে ডিপিপি দাখিল করেছি। বর্তমানে এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এখানে আমাদের প্রস্তাবিত ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৫ শ কোটি টাকা। এটি অনুমোদিত হলে আশা করি চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পটি নতুনভাবে আমরা পুনর্বাসন করতে পারব। চাঁদপুর নদী ভাঙনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে।

আনোয়ারুল হক/এমজেইউ