প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিলেই মিলবে নিত্যপণ্য
দোকানের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ। প্রত্যেকের হাতে প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্যপদার্থ। উদ্দেশ্য, কাউন্টারে জমা দেবেন এসব প্লাস্টিক। তাহলেই যে আর আলাদা করে অর্থ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হবে না! মূলত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দূষণ কমাতেই ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
আয়োজকরা জানান, সেন্ট মার্টিনের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে-সেখানে এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ; হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। সৈকত ও সমুদ্র দূষণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকতে নানাভাবে বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। স্থানীয়দের ধারণা পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্ট মার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন। এসব চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, দ্বীপের এই প্লাস্টিকের দূষণ কমানোর জন্য এই উদ্যোগ সত্যিই অসাধারণ। এর ফলে দ্বীপের মানুষ প্লাস্টিকের খালি পাত্র বা বোতল জমা দিতে আগ্রহ দেখা গেছে।
আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। সকাল থেকে এখানকার অনেক মানুষ সমুদ্রের পাড় থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে বুথে জমা দিতে দেখা গেছে। এর ফলে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, দ্বীপে প্লাস্টিক ব্যবহার একেবারে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। যদি নতুন এই কর্মসূচি সফলতার মুখ দেখে তাহলে এটিকেই গুরুত্ব দিয়ে দ্বীপকে নিরাপদ রাখতে হবে। আমরা চাই এই কর্মসূচি দীর্ঘমেয়াদী হোক। মানুষ এটা সম্পর্কে যেন জানতে পারে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে যেমন দূষণ রোদ হবে আবার অসহায় মানুষদেরও অনেক উপকার হবে। মানুষ তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের খালি পাত্র বা বোতল জমা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার চালু করা হবে। ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক জমা দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একটি বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। অনাথ ও বঞ্চিত শিশুদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যানন্দ এক টাকায় আহার, শীতকালীন ও ঈদে নতুন কাপড় বিতরণ, বিনামূল্যে শিক্ষা কর্মসূচি এবং এক টাকায় চিকিৎসাসহ বেশ কয়েকটি নিয়মিত কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
এর বাইরেও সংস্থাটি প্রতিনিয়ত সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আর এমনই একটি উদ্যোগ ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ স্থাপন। যা দিয়ে কক্সবাজারে নির্মিত হবে প্লাস্টিকের তৈরি বিশাল আকৃতির দানব।
সাইদুল ফরহাদ/এমজেইউ