একসঙ্গে ৩ কন্যার জন্ম, ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছেন দিনমজুর বাবা
অন্যের জমিতে কাজ করে কোনো রকম সংসার চলে আনারুল ইসলামের। ঘরে রয়েছে ২৪ ও ২০ বছর বয়সী দুই ছেলে। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে আবার শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। এরই মাঝে আনারুল-খাইরুন নেসা দম্পতির ঘর আলো করে একসঙ্গে তিন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। তাদের আগমনে পরিবারে খুশির আমেজের পরিবর্তে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে।
আনারুল ইসলাম (৫১) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। তার স্ত্রী মোসা. খাইরুন নেসা (৪২) গত ৩ অক্টোবর রাতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে একসঙ্গে তিন কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সন্তানরা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ও জন্মের পর তাদের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। ফলে দিনমজুর বাবার পক্ষে সংসার চালানোর পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে আনারুল ইসলাম-খাইরুন নেসা দম্পতির সঙ্গে কথা হয়। তারা তিন সন্তানের চিকিৎসা শেষে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন ১০ দিন। এতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। একসঙ্গে তিন সন্তানের ওষুধ কিনতে গিয়ে বিভিন্নজনের কাছে ধারদেনা করতে হচ্ছে।
খাইরুন নেসা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন মাস আগে ওদের জন্ম হয়েছে। জেলা হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে। তানা হলে কি করতাম আল্লাহ ভালো জানেন। তিন বাচ্চা হওয়াতে ঠিকমতো দুধ পাচ্ছে না। টাকার অভাবে বাইরের কেনা দুধও খাওয়াতে পারছি না। আমরা গরিব-অসহায়, কেউ একটু সহযোগিতা করলে খুব উপকার হতো।
দিনমজুর আনারুল ইসলাম বলেন, আমার কোনো জমি-জমা নেই। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ ও মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালাই। বড় এক ছেলে প্রতিবন্ধী। কাজ করতে পারে না। ঠিকমতো সংসারই চালাতে পারি না। এর মধ্যে আরও তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়ে বিপাকে পড়েছি। তাদের জন্য ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসা-ওষুধের ব্যবস্থা করতে পারছি না। ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ও ওষুধ কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
খাইরুন নেসার ছোট বোন মোসা. ভাদুরী খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন মেয়ের নাম রাখা হয়েছে মুরশিদা, মাসুমা ও শামিমা আক্তার। তিন মেয়েকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আমার বড় বোন। তাই আমাকে তাদের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। টাকার অভাবে খুব সমস্যা হচ্ছে। ঠিকমতো বাইরের দুধ ও ওষুধপত্র কিনতে পারছি না।
সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি একেবারেই গরিব ও অসহায়। আনারুলের কিছুই নেই বললেই চলে। হাতে খাটে পেটে খায় এমন অবস্থা। আনারুল আমার কাছে এসেছিল আর্থিক সাহায্যের জন্য। কিন্তু আমাদের করার তেমন কিছু নেই। এরপরও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার জন্য কিছুটা হলেও সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মাহফুজ রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক দিন আগে নিউমোনিয়া নিয়ে একসঙ্গে তিন সন্তান জন্ম দেওয়া জননী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তিন সন্তানের মধ্যে একজনের অবস্থা খুবই জটিল ছিল। কিন্তু এখন তারা চিকিৎসা শেষে মোটামুটি সুস্থ। তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তিন শিশুর দৈনিক প্রায় ২৫০০ টাকা করে ওষুধপত্র লেগেছে। যা হাসপাতাল থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে।
জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফিরোজ কবীর বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ও নির্দিষ্ট ছয়টি রোগে আক্রান্ত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে তিন সন্তান জন্মদানের বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তেমন করণীয় নেই। বা কোনোভাবে আর্থিক সহায়তা করার সুযোগ নেই। তবে পরিবারটি প্রশাসনের শরণাপন্ন হলে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রওশন মুঠোফোনে আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার নির্দেশনায় সারা দেশে এমন অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা হয় প্রশাসনের মাধ্যমে। পরিবারটি সদর উপজেলায় সাহায্যের আবেদন করলে বা আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের আর্থিক সহায়তা করব।
জাহাঙ্গীর আলম/এসপি