সাইদুলের কার্পেট কারখানায় কাজ করেন ৪০ জন, মাসে আয় ৫০ হাজার
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের পানিহাকা গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। এক সময় রাজধানী ঢাকায় কার্পেট কারখানায় কাজ করতেন। পরে নিজ এলাকায় এসে কারখানা দেন। শুরু করেন কার্পেট তৈরির কাজ। তার কার্পেট বিক্রি হচ্ছে আড়ং, অঞ্জনসহ বিভিন্ন দামি ব্রান্ডে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও পর্যটন এলাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। এতে তার মাসে আয় হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
সাইদুলের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, রং-বেরংয়ের উল আর সুতা দিয়ে কার্পেট তৈরি করছেন কারিগররা। কারিগরদের মধ্যে অর্ধেকই নারী। নারীরা সংসারের কাজ করে অবসর সময়ে কার্পেট কারখানায় কাজ করছেন। কার্পেটের পাশাপাশি তৈরি করছেন ফ্লোরমেট, ওয়ালম্যাট, প্রেসম্যাট, পাপোস, কুশন কাভার, কলমদানি, কলেজ ব্যাগ ও মোবাইল ব্যাগ।
বিজ্ঞাপন
এ কাজ থেকে তাদের দিনে আয় হচ্ছে ৪০০-৫০০টাকা। আর পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে স্কুল-কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছে। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কার্পেট তৈরির কাজ শিখছেন। তারাও মাস শেষে আয় করছেন ১০-১২ হাজার টাকা। মান ও ফুট হিসেবে একেকটি কার্পেট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কারিগররা জানান, তারা প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকার কাজ করতে পারেন। যেহেতু প্রডাকশনভিত্তিক কাজ, তাই আকারভেদে কার্পেট তৈরি করতে সময় লাগে। যেমন দুই বাই তিন ফুটের কার্পেট তৈরি করতে সময় লাগে এক দিন, তিন বাই পাঁচ ফুট কার্পেটে দুই দিন, চার বাই পাঁচ ফুট কার্পেটে তিন দিন ও পাঁচ বাই সাত ফুটের কার্পেটে ৪ দিন সময় লাগে। আকার অনুযায়ী কার্পেট তৈরি করে ৩৫০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান তারা।
নারী কারিগর পারভীন আক্তার বলেন, আমার তিন মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী মিলে পরিবারে সদস্য পাঁচজন। আমার স্বামী কৃষিকাজ করে। তার উপার্জনে সংসার ভালোভাবে চলে না। সেজন্য এখানে কাজ শিখে কার্পেট তৈরি করছি। নিজের আয় থেকে সন্তানদের লেখাপড়রে খরচ দিতে পারছি।
অপর কারিগর আজিবদ্দিন বলেন, আমি গাজীপুরে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। এখন এখানে সাইদুল ভাইয়ের কারখানায় পরিবার নিয়ে কাজ করছি। বেশ ভালো যাচ্ছে দিন। এখানে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন, রাসেলসহ কয়েকজন জানান, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে এসে কাজ শিখেছি। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি। পাশাপাশি আমার পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছি।
উদ্যোক্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, বছর সাতেক আগে রাজধানী ঢাকায় কার্পেট কারখানায় কাজ করতাম। সেখানে দীর্ঘ দিন কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের এলাকায় কারখানা গড়ার স্বপ্ন দেখি। তাই চাকরি ছেড়ে চলে আসি গ্রামে। নিজের উপার্জন আর এনজিও থেকে কিছু ঋণ নিয়ে দুটি কার্পেট মেশিন কিনে নিজেই কার্পেট বানাতে থাকি। পরে এলাকার কয়েকজনকে কাজ শিখিয়ে ‘রংবেরং এন্ড হ্যান্ডিক্রাফটস’ নামে কারখানা গড়ে তুলি। দীর্ঘ ৫ বছর কঠোর পরিশ্রমে এখন কারখানায় ৪০টি মেশিনে কাজ করছেন ৪০ জন কারিগর। এসব কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন আমার স্ত্রী রুমি আক্তার।
তিনি আরও বলেন, আমার কারখানায় তৈরি প্রতিটি পণ্যই উন্নতমানের। এসব পণ্য আড়ং ও অঞ্জনসহ দামি ব্র্যান্ডের কাছে বিক্রি করে থাকি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশ থেকেও আমার কারখানার কার্পেট নিতে অর্ডার আসছে। ইচ্ছে আছে কারখানাটা বড় করার। কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই, তাই সরকার থেকে যদি আর্থিক প্রণোদনা কিংবা অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে কারখানার পরিধি বাড়িয়ে বেকারদের কাজ শিখিয়ে কর্মসংস্থনে তৈরি করতে পারতাম।
সাইদুল ইসলামের সহধর্মিণী রুমি আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় কার্পেট ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। সেখান থেকে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসে কারখানা দিয়েছেন। এলাকার অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে কারখানা আরও বড় করতে পারব। এতে অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
এসকে দোয়েল/এসপি