যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রকাশ করা ১০০ প্রভাবশালী ও অনুকরণীয় নারীর তালিকায় স্থান পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। দেশে বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করায় তাকে এ তালিকায় রেখেছে সংবাদমাধ্যমটি । 

সানজিদার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামে। তিনি মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া সোহেল ও লিজা আক্তার দম্পতির মেয়ে। সানজিদা কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করছেন।

২০১৪ সালে নান্দাইল পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছয় শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আন্দোলন গড়ে তুলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সেই সংগঠনের নাম ‘ঘাসফড়িং’। সেখান থেকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তবে বর্তমানে সবাই আলাদা আলাদা কাজ করছেন। সানজিদার দলের অন্যরা হলেন- তুলি দেবনাথ, স্নেহা বর্মণ, লিজুয়ানা তাবাসসুম, জান্নাতুল ইসলাম প্রান্তি, জীবননিসা খানম শ্যামা ও জান্নাতুল আক্তার।

সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া বলেন, বিবিসির করা জরিপে বিশ্বের ১০০ নারীর মধ্যে আমি নিজেও একজন। এ কারণে আমি খুবই আনন্দিত। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এতে আমিও যেমন অনুপ্রাণিত হয়েছি তেমনি অন্যান্য মেয়েরাও নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হবে। এ অর্জন আমার দলের বাকি ছয় শিক্ষার্থীকে উৎসর্গ করছি। তারা আমার পাশে ছিল বলেই এ কাজকে আমি এগিয়ে নিতে পেরেছি।

সানজিদা বলেন, বিদ্যালয়ের একটি উপস্থাপনায় অনুপ্রাণিত হয়ে বাল্যবিবাহ রোধে আমার কাজ শুরু হয়। বাল্যবিবাহের খবর পেলেই বন্ধু ও পুলিশ নিয়ে কীভাবে মেয়েদের রক্ষা করা যায় তার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, অল্প বয়সে বিয়ে করা খাঁচায় বন্দী জীবনের মতো।

সানজিদার মা মোছা. লিজা আক্তার বলেন, মেয়ে এমন স্বীকৃতি পাওয়ায় মা হিসেবে আমি আজ গর্বিত এবং আনন্দিত। সানজিদার এ কাজে আমি কখনো বাধা দিইনি বরং সহযোগিতা করেছি। আমি চাই, বাংলার প্রতিটি ঘরে এমন সাহসী সানজিদা গড়ে উঠুক।      

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছোঁয়াকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। যে ধরনের সহযোগিতা দরকার আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো। আমরা সবাইকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।

২০২২ সালের ওই তালিকায় বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের নাম উঠে এসেছে। যেসব নারী আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও বিশ্বকে নতুনভাবে উদ্ভাবনে ভূমিকা পালন করছেন তাদের এই তালিকায় স্থান দিয়েছে বিবিসি। চারটি বিভাগে এই ১০০ নারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতি ও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা, অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা এবং স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান। এটি এ তালিকার দশম সংস্করণ। এতে অধিপরামর্শ ও সক্রিয়তা ক্যাটাগরিতে বাল্যবিবাহ রোধে বাংলাদেশের সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া ২১তম স্থানে রয়েছেন।

সানজিদা ইসলামের অবদান সম্পর্কে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিয়ের ধারা বদলানোর চেষ্টা করছেন। তার মায়েরও বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। স্কুলে বাল্যবিবাহের প্রভাব নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেখে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হন তিনি।

সানজিদা, তার বন্ধু, শিক্ষক ও সহযোগীরা নিজেদের ঘাসফড়িং হিসেবে পরিচয় দেন। বাল্যবিয়ের কোনো ঘটনা জানলে তারা পুলিশকে জানান। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়েও সানজিদা ঘাসফড়িংয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ভূমিকা রেখেছে ঘাসফড়িং।
 
সানজিদা ছাড়াও এবারের তালিকায় বিশ্বখ্যাত পপ তারকা বিলি আইলিশ, ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা, অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস ও সেলমা ব্লেয়ার, 'রুশ পপ সঙ্গীতে সম্রাজ্ঞী' এলা পুগাচেভা, ইরানি পর্বতারোহী এলনাজ রেকাবি, ট্রিপল জাম্প অ্যাথলিট জুলিমার রোহাস এবং ঘানার লেখিকা নানা ডার্কোয়া সেকিয়ামার নাম রয়েছে।

উবায়দুল হক/এমএএস