ঝিনাইদহে পুকুর সেচের পানিতে কৃষকের পাকা ধান ও বীজতলা নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে পুকুর মালিকের বিরুদ্ধে। রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে সদর উপজেলার বাথপুকুরিয়া গ্রামের মাঠে ৪০ বিঘা জমির পাকা ধান ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগে নজরুল নামে এক কৃষক সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাদপুকুরিয়া গ্রামের মাঠে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল ব্যবহার করা হয়, ক্ষেতে সেই খাল দিয়েই পানি ঢুকে পড়ছে। ওই পানিতে তলিয়ে গেছে পাকা ধান ও বীজতলা। কয়েকজন কৃষক ধান বীজতলার পানি সেচে চারাগুলো বাচানোর চেষ্টা করছে। 

বাদপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, তিনিসহ মাঠের কৃষকেরা পাকা ধানকাটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ডহর-পুকুরিয়া গ্রামের ওমর আলী ভূঁইয়া, করম আলী ভূঁইয়া, রেকমত আলী, কেরামত আলী এবং সামছুদ্দিন দীর্ঘ ১৪ থেকে ১৫ দিন ধরে রাতের আঁধারে তাদের পুকুর সেচের কাজ করছেন এবং সেই পানি তাদের পাকা ধানক্ষেতে ঢুকে পড়ে। কৃষকেরা বারবার ধানি জমিতে পানি দিতে নিষেধ করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। কৃষকেরা জমিতে পানি না ঢোকার জন্য খালের মুখে বাধ দেন। তারপরও পুকুর মালিকেরা রাতের আঁধারে বাধ কেটে পাকা ধানক্ষেতে পানি ঢুকিয়ে দিয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে তারা পুকুরের পানি পাকা ধানক্ষেতে দিয়েছেন। এর ফলে ওই মাঠের কৃষকেরা ১২ লাখ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পুকুর মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই ধানকাটার মৌসুমে পুকুর সেচে তাদের জমিতে পানি দিয়ে একই রকম ক্ষতি করে আসছে।

কৃষক আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে জানান, ওপর থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। ভূঁইয়ারা পুকুর সেচতেছে, তাদের অনুরোধ করে বলেছিলাম, চাচা আপনারা পুকুর সেচা কয়টা দিন বন্ধ করেন। পাকা ধানগুলো গুছায়ে নেই, চারটে বিচলী হবে। তারপরও তারা কোনো কথা শুনেনি। মাঠে ধান কাটতে এসে দেখি পানিতে ধানগুলো তলিয়ে গেছে, ধান বীজও নষ্ট হয়ে গেছে।

একই মাঠের কৃষক আজিজুল, আব্দুল গাজি, শ্রী সন্তোষ কুমার, আতা মিয়া ও নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, মাঠে যখন পানি দেখি তখনি বুঝতে পারি পুকুর সেচা পানি মাঠে ঢুকেছে। তখনি আমরা সবাই মিলে ভূঁইয়াদের পুকুরের পানি পাকা ধানক্ষেতে দিতে নিষেধ করি। ভেবেছি আর হয়তো পানি দেবে না। কিন্তু সকালে ধানকাটতে এসে দেখি ক্ষেতের মধ্যে হাঁটু সমান পানি। তলিয়ে গেছে বীজতলা। এখন ধানগুলো কোনো রকম রক্ষা করতে পারলেও বিচুলী হবে না, আবার শ্রমিক খরচও বেশি লাগবে। এই অবস্থায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সবাই।

অভিযুক্ত পুকুর মালিকেরা ঢাকা পোস্টকে জানান, ১০ দিন আগেই তাদের পুকুর সেচ হয়ে গেছে। পুকুরের পানি ঢুকে ধান নষ্ট হচ্ছে, কৃষকেরা তাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমানে পাশের পুকুর মালিকেরা পুকুর সেচে পানি বাইরে দিচ্ছে।

ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরেজমিন সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষকের পাকা ধান ও বীজতলা ক্ষতি হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে পুকুর সেচের পানির কারণেই এমন ক্ষতি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে