১৬ দিন পর মরদেহ ফেরত দিল বিএসএফ, ক্ষতিপূরণ চান স্ত্রী
ফেনীর পরশুরাম সীমান্তের ওপারে পড়ে থাকা কৃষক মেজবাহ উদ্দিনের (৪৭) মরদেহ ১৬ দিন পর ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। মেজবাহকে বিনা অপরাধে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তার স্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের চেকপোস্ট দিয়ে বিএসএফ মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। এসময় দুই দেশের সীমান্তবর্তী থানা পুলিশ উপস্থিত ছিল।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবির খেজুরিয়া কোম্পানি কমান্ডার জেসিও সুবেদার ওমর ফারুক, পরশুরাম মডেল থানার ওসি সাইফুল ইসলাম এবং বিএসএফের পক্ষে সারসীমা কোম্পানি কমান্ডার এসি সত্যিয়া পাল সিং ও বিলোনিয়া থানার ওসি পারিতোষ দাস উপস্থিত ছিলেন।
মেজবাহ উদ্দিন পরশুরাম উপজেলার উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে। গত ১৩ নভেম্বর উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামে সীমান্তবর্তী এলাকায় ধান কাটতে গেলে বিএসএফ মেজবাহ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন পর স্থানীয়রা তার মরদেহ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের একশ গজ ভেতরে পড়ে থাকতে দেখে বিজিবিকে খবর দিলে ১৬ নভেম্বর রাত ৩টায় বিজিবি-বিএসএফের বৈঠক শেষে মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফ।
মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ হস্তান্তরের সময় পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, একমাত্র ছোট বোন পারুল আক্তার, চার কন্যা সন্তান, পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল ও স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন।
বিজিবির পরশুরামের মজুমদার হাট সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান জানান, বিজিবি-বিএসএফ ও পুলিশের উপস্থিতিতে আইনগত প্রক্রিয়াযর মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহত মেজবাহ উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, এটা যে তার স্বামীর মরদেহ, তা চেনার কোনো উপায় নেই, মরদেহ অনেকটা পচে গলে গেছে। তিনি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএসএফ তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে নিয়ে বিনা অপরাধে হত্যা করেছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন সুমন জানান, গত ১৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মেজবাহ উদ্দিন বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যান। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে যান। মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ শনাক্তের কোনো সুযোগ নেই, মরদেহ পচে গলে গেছে।
ভারতের বিলোনিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক পারিতোষ দাস জানান, নিহত মেজবাহ উদ্দিনের শরীরে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো তাদের হাতে আসেনি। অফিশিয়ালি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বাংলাদেশ পুলিশকে দেওয়া হবে।
পরশুরাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ ফেরত দেওয়ায় পর ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহ হস্তান্তরের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরশুরাম থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) পার্থ প্রতীম দেব, বিলোনিয়া বিএসএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট এমএম লাল, বিলোনিয়া থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ন পাল, বিলোনিয়ার মজুমদারহাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মনিরুজ্জামান, বিলোনিয়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন প্রমুখ।
আরএআর