প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্টে সার উৎপাদন করে সফল নাঈম
দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার নাঈম হুদা চাকরি ছেড়ে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে একজন সফল উদ্দ্যোক্তা হয়েছেন। নিজের কৃষিকাজে এই জৈব সার ব্যবহার করে গড়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার কেঁচো সার ও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার কেঁচো বিক্রি করে। এখন প্রতিমাসে নাঈমের কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে আয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা।
নাঈম হুদা তেঁতুলিয়া বৈকণ্ঠপুরের বাসিন্দা ফজলুর রহমানের ছেলে। তিনি ভুসির বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি, ভুসির বন্দর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি ও ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করে উত্তরা ইপিজেডের চাকরি নেন। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে হয়েছেন সফল উদ্দ্যোক্তা।
বিজ্ঞাপন
নাঈম হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৬ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে সময় দেই এরপরে উত্তরা ইপিজেডে চাকরি পাই। সেখানে প্রায় দুই বছর চাকরি করি। চাকরিতে যে পরিমাণ শ্রম দিতাম সে পরিমাণ অর্থ পেতাম না। তখন মাথায় চিন্তা আসে বাসার কৃষিতে যদি এর থেকে কম সময় ও শ্রম দেই তাহলে এর থেকে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারব। পরে ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে বাসায় এসে কৃষিতে মনোযোগ দেই এরপরে একে একে করে কমলা বাগান, মাল্টা বাগান ও মিশ্র ফল বাগান, পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। তখন দেখি ফল বাগানে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজন হচ্ছে। তখন কৃষি অফিসের পরামর্শে দুই শতক মাটির উপর কেঁচো কম্পোস্ট এর একটা প্রজেক্ট দেয় উপজেলা কৃষি অফিস। সেই থেকে কেঁচো কম্পোস্ট সার দিয়ে ফলবাগানের ফলন ভালো হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরে আমি এটা আমর পুকুরের মাছকে খাওয়ানো শুরু করি। মাছেও ভালো ফলাফল আসে। তখন গ্রামের অনেকে আমার দেখাদেখি ধানের জমিতে সবজি ক্ষেতে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার শুরু করে। যখন দেখি কেঁচো খামারে ভালো মুনাফা আছে তখন আমি এই সার ও কেঁচো নিয়ে গবেষণা শুরু করি তখন হাউজ ও রিং থেকে বাংলাদেশে প্রথম ট্রেতে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করলাম। এখন পরীক্ষামূলকভাবে বস্তার মধ্যেও শুরু করেছি কেঁচো কম্পোস্ট সার। ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমত ভালো রেজাল্ট পাচ্ছি।
প্রকৌশলী নাঈম বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় খামরটি বড় করার জন্য আমি আরও কিছু হাউজ তৈরি শুরু করছি। এখন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় শতক মাটির উপর তেরি করেছি কেঁচো কম্পোস্ট এর খামার। এ খামার থেকে প্রতি মাসে গড় ৪ থেকে ৫ টন কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদিত হয়। প্রতি টন কেঁচো কম্পোস্ট সার ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করি পাইকারিভাবে। আর খুচরা এ সার বিক্রি হয় ১৬ টাকা থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। আমাকে দেখে অনেকে এখন এ খামার করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। কেউ কেউ আমার কাছ থেকে কেঁচো নিয়ে গিয়ে বাসায় ছোট পরিসরে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করছে। এখন প্রতিমাসে ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছি।
তেঁতুলিয়ার গ্রামের কৃষক হযরত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাঈমের সবজি খেতে জৈব সার ব্যবহারের ফলে তার সবজির ফলন ভালো ও খরচ কম হওয়ায় তার দেখাদেখি, তার কাছ থেকে সার কিনে আমার সবজি ক্ষেতে দিছি। সবজি ক্ষেতের রেজাল্ট ভালো হয়েছে।
বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক সাকিল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাঈম আমাদের গ্রামের ছেলে তার কাছ থেকে জৈব সার নিয়ে কলা বাগানে দিছিলাম সাথে লাল শাক ক্ষেতেও দিছি। কলা ও শাকের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে যে খরচ হত তার থেকে অনেক কম খরচ হয়েছে জৈব সার ব্যবহার করে।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিরিরবন্দর উপজেলায় এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প চালু করেছি এর মধ্যে অনেকে ভালো করেছে। তবে নাঈম হুদা উদ্যাক্তা হিসেবে খুব ভালা করছে। সে ইতোমধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রি করে ভালা একটা অবস্থা তৈরি করেছে। কৃষি বিভাগ নাইমের ভার্মি কম্পোস্ট মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউট ভার্মি কম্পোস্ট এর স্যাম্পল পাঠিয়েছি। সেই সাথে আমরা বগুড়া আরডিএতে স্যাম্পল পাঠানোর ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। যাতে আমরা বুঝতে পারি এই ভার্মি কম্পোস্টে কী কী পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে।
ইমরান আলী সোহাগ/আরকে