নৌ-শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে বিপাকে যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা
নদীপথে চাঁদাবাজি ও শ্রমিকদের নির্যাতন-হামলা বন্ধে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন যাত্রি ও নৌ-পথে মালামাল পরিবহন করা বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। সোমবার (২৮ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো এই ধর্মঘট চলমান রয়েছে। ৭ দফা দাবি আদায় না হলে ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌ-শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকা, নদীপথে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধসহ ৭দফা দাবিতে সারাদেশে নৌ-পথে শ্রমিকদের কর্মবিরতিকে শ্রম অধিদপ্তর বেআইনি বলে মন্তব্য করায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পালন করছে সাধারণ নৌ-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো তারা এই ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের ৫নং মাছঘাট ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় সর্বস্তরের নৌ-শ্রমিক ও নাবিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে কর্মবিরতি পালন করছে। নদীতে তাদের নৌযান নোঙ্গর করে সড়কে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
নারায়ণগঞ্জের জাহাজের সুকানি নয়ন হাওলাদার বলেন, নৌপথে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এই নৌ-পুলিশ এখন আমাদের মরার ওপর খাড়ার ঘাঁতে পরিণত হয়েছে। নদীপথে বিভিন্ন অযুহাতে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা লুট করে নেয়। তাদের টাকা দিলে সব বৈধ, আর না দিলে হতে হয় নির্যাতন ও নানা হয়রানির শিকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জাহাজের মাস্টার ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু পুলিশ নয় সঙ্গে আছে নদী পথের সন্ত্রাসীরা, নাসির গ্যাংদের লোকজন নারায়ণগঞ্জের ৮-১০টি স্পটে চাঁদাবাজী করে আসছে। নৌপথে এত কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ থাকার পরেও তারা ফ্রি স্টাইলে চাঁদাবাজী করছে। আমরা এখন সবার কাছেই জিম্মি হয়ে গেছি। এই নদীপথে চাঁদাবাজ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দিন শেষে পরিশ্রম করে যদি পারশ্রমিক না থাকে তবে আমরা কীভাবে এই কাজ করব। যা কিছু আমাদের আয় হয় তাও চাঁদাবাজদের দিয়ে দিতে হয়। আমরা আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা খেয়ে-পগে বাঁচব সেই পরিস্থিতি নাই। আমরা যে ৭ দফা দাবি করেছি তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের এই কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
বাংলাদেশ জাহাজী শ্র্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত নৌ শ্রমিকরা মালিকদের কাছে মজুরি বাড়ানো দাবি করে আসছে। কিন্তু মালিকপক্ষ ও শ্রম অধিদপ্তর এটি কোন আমলে নিচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতির কারণে নৌ শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকা, নদীতে চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধ, বিভিন্ন স্থানে লেন্ডিংপোর্ট, ভারতীয় পাসসহ ৭ দফা দাবি সরকার ও মালিকদের কাছে বিভিন্ন সময় উত্থাপন করলেও তারা তা মানছে না। যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা না হবে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলবে। এর দায় দায়িত্ব আমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় ও নৌ-মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান রাজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার পর সারা দেশের জাহাজ ব্যবসায়ীরা লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি ও সংগঠনের চেয়ারম্যানসহ অনেক জাহাজ মালিকরা জাহাজ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা মজুরি ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকাসহ যে ৭ দফা দাবি উথাপন করেছে তা মেনে ব্যবসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
নারায়ণগঞ্জ নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীনা মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে জানান, নৌপথে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। তবে নাসির গং তার সহযোগীদের নিয়ে চাঁদাবাজী করে আসছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। চাঁদাবাজী বন্ধে আমার তিনটি ফাঁড়িকে দুই শিফটে ডিউটি দিয়েছি। এছাড়া অভিযুক্ত চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনা দিয়েছি। তবে পুলিশের চাঁদাবাজীর সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা বা প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবির শিকদার/আরকে