মানিকগঞ্জে উৎপাদিত সবজির চাহিদা রয়েছে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায়। ফলে জেলায় শিম, বেগুন, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, শসাসহ নানা ধরনের সবজির আবাদ হচ্ছে পুরোদমে। আর তাই মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজি চাষিরা।

জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মানিকগঞ্জের সাত উপজেলার কৃষকরা শীতকালীন নানা ধরনের সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর মধ্যে সদর, সিংগাইর ও সাটুরিয়ায় সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয়ে থাকে। চলতি বছর সবজি আবাদে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বাড়তি থাকায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তবে উত্তম পরিচর্যায় ফলন এবং পাইকারি বাজারে সবজির বাজারদর ভালো থাকলে সবজিতে লাভের আশা করছেন চাষিরা।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা সবজির আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সবজি আবাদ হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালা এলাকায় কৃষক মো. পলাশের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতবার প্রায় ৭ বিঘা জমিতে শসা, লাউ, করলা এবং মুলার আবাদ করেছিলাম। এ বছর দুই বিঘা জমিতে করলা, মুলা আর লাউ আবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১৭ হাজার টাকা। এবার সবজিতে লাভ না হলেও চালান তুলতে পারলেই খুশি।

একই এলাকার সবজি চাষি মো. সুলতান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের জমি-জমা নেই। এক লাখ টাকা দিয়ে সাড়ে ৩ বিঘা জমি দুই বছরের জন্য রাখছি। সেখানে ফুলকপির আবাদ করেছি। জমি তৈরি, সার, চারা, জমিতে পাম্প মেশিন স্থাপনসহ খরচ হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখন কপির বাজারদর একটু কমে গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি পিস কপি বিক্রি করছি ১৫-২৫ টাকা করে। বাজারদর ভালো পেলে কয়েক লাখ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারব। তাতে কিছু লাভও হবে।

সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামের কৃষক মো. ইয়াসিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৪ বছর দুবাইতে ছিলাম। বাড়িতে এসে কৃষিকাজ করে সংসার চালাইতাছি। এ বছর ৪০ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছি। এর মধ্যে ১৫ শতকে লাউ, দশ শতকে বেগুন বাকি ১৫ শতকে শিম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত সবজি চাষে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ভাদ্র মাসে শসার চাষ করে তেমেন সুবিধা করতে পারি নাই। পোকা লাইগা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ গতবার ১৫ শতক জমিতে শসার আবাদ করে প্রায় দেড় লাখ টাকার বিক্রি করেছিলাম। এবার আল্লাহ যদি দয়া করে ফলন ভালো দেন আর পাইকারি বাজারদর ভালো পাই তাহলে লাভ না হলেও চালান তুলতে পারব।

সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক লালচান মিয়া ঢাকা পোস্টেকে বলেন, গতবারের চাইতে এই বছর সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। গত বছর প্রতি কেজি ইউরিয়া সার ১৮ টাকা কেজি দরে কিনেছি। আর এ বছর কিনতে হচ্ছে ২৬ টাকা কেজি। পটাশ কেজিতে ৭ টাকা, টিএসপি কেজিতে ৫ টাকা এবং ৮০ টাকার কীটনাশক কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। এসব কারণে এবার সবজির উৎপাদন খরচও বেশি হচ্ছে। কিন্তু বাজারদর ভালো না পাইলে লোকসান গুনতে হবে।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ‍কৃষিবিদ আবু মো. এনায়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবজি উৎপাদনে দেশজুড়ে মানিকগঞ্জের সুনাম রয়েছে। রাজধানীর কাছাকাছি জেলা হওয়ায় এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত সবজির বেশ চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রতি রবি মৌসুমে জেলার কৃষকরা নানা ধরনের সবজি আবাদ করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, সবজি চাষিদের জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে সারের দাম কিছুটা বাড়লেও সারের ওপর চাষিদের ভর্তুকিও দেওয়া হয়েছে। অনূকুল আবহাওয়া, ভালো ফলন এবং বাজারদর ভালো থাকলে জেলার সবজি চাষিরা লাভবান হবেন।

সোহেল হোসেন/এসপি