নোয়াখালীতে চোখ ধাঁধানো ‘বাইক স্ট্যান্ট’ সিনেমাকেও হার মানায়
একদল তরুণের ফাঁকা রাস্তায় বাইক নিয়ে করা হরেক রকম কেরামতি দেখে মনে হতে পারে যেন হলিউড কিংবা বলিউডের কোনো সিনেমার দৃশ্য। মোটরসাইকেল নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনের নাম ‘বাইক স্ট্যান্ট’। যা পশ্চিমা দেশগুলোতে তুমুল জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে অতটা নয়। তবে সম্প্রতি নোয়াখালীতে বাইকারদের মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের এ খেলা। আর তাই ভিন্নধর্মী এ আয়োজন যেখানেই প্রদর্শন করা হয়, সেখানেই উৎসুক দর্শকদের ভিড় জমে। চোখ ধাঁধানো ও শ্বাসরুদ্ধকর এসব পারফরম্যান্স দেখে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
দেশের প্রতি সম্মান জানাতে ভিন্নধর্মী এ আয়োজনের শুরুতেই থাকে মোটরসাইকেল নিয়ে জাতীয় পতাকা প্রদর্শন, যার নাম ক্রাইস্ট স্ট্যান্ট। এরপরই বাইক স্ট্যান্টরা একে একে প্রদর্শন করেন সাইড স্কিচ, হাইচেয়ার, হিউম্যান কম্পাস, বার্নআউট, বেসিক হুইলি, স্টপি, রোলিং স্টপি, চেইনশো, ৩৬০ ডিগ্রির মতো অসাধারণ স্ট্যান্ট। টান টান উত্তেজনা নিয়ে দুর্দান্ত এসব স্ট্যান্ট উপভোগ করেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনে এসব স্ট্যান্ট দিন দিন হয়ে উঠছে আরও নান্দনিক।
বিজ্ঞাপন
একদল স্বপ্নবাজ তরুণদের হাত ধরে ২০১৪ সালের মহান বিজয় দিবসে নোয়াখালীর মানুষ প্রথম পরিচিত হয় অভিনব এই খেলার সাথে। সে বছরই নোয়াখালীর বাইকপ্রেমী তরুণদের সংগঠন ‘নোয়াখালী রাইডার্স- এনআরজেড’ এ যাত্রা শুরু। ৯ জন নিয়ে শুরু করা বাইকিং কমিউনিটির ৮ বছরের ব্যবধানে সদস্য এখন প্রায় ৯০০ জন।
চোখ ধাঁধানো ও শ্বাসরুদ্ধকর এসব পারফরম্যান্স দেখে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠে। সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এই তরুণরা তাদের দূর্দান্ত পারফমেন্সের মাধ্যমে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার স্বপ্ন দেখে।
জাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমাজে বাইক স্ট্যান্টকে অনেকে অনেক ভাবে নেন। ঝুঁকি মনে করে পরিবার থেকেও প্রথমে সাপোর্ট দেয় না। যখন আমরা সকল নিরাপত্তা মানার বিষয়টি বোঝাই তখন পরিবার সাপোর্ট দেয়। আমরা মাদকসহ অন্যায় অপরাধ থেকে দূরে আছি। মানুষকে ভালো কিছু দেখানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ব্যবসায়ী নুর এ ফারদিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলায় বাবাকে দেখে বাইক চালানোর শখ। বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার ব্যবসা দেখছি। পাশাপাশি বাবার বাইক দিয়ে বাইকের বিভিন্ন স্ট্যান্ট শিখেছি। আমি প্রতিদিন ভোরে এসে বাইক নিয়ে স্ট্যান্ট করি। প্রায় ১২টা জেলা বাইক নিয়ে ঘুরেছি। ৬৪টি জেলা আমি বাইক নিয়ে ঘুরতে চাই।
সাইমুন মাহমুদ নামের আরেক স্ট্যান্ট সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাইক স্ট্যান্ট এ ঝুঁকি আছে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা স্ট্যান্টে ঝুঁকি আছে। এটা ক্রাইম নয় এটা স্পোর্টস। বাংলাদেশে এখনো স্বীকৃতি নেই। আমরা আশা করি সরকার খেলাটিকে ভালোভাবে নেবে। তাহলে আমরা স্ট্যান্ট পারফর্ম করে বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারব।
রিকশা চালক সুজন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খেলাটা দেখে ভালো লাগলো। এই খেলা গুলো দেশে বিদেশে দেখাতে পারলে দেশের জন্য সম্মান বাড়বে। তাদেরও ভালো হবে। তারা খারাপ কোনো কিছুর সাথে জড়িত না বলেই জানি।
রোমানা আক্তার সাথী নামের এক লেডি বাইকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এরা মোটরসাইকেল দিয়ে খুব সুন্দর করে খেলা দেখায়। আমি খুব এঞ্জয় করি। আমি প্রত্যাশা করবো তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে এবং নোয়াখালীর মুখ উজ্জ্বল করবে। নোয়াখালীতে এমন টিম আছে তা আগে জানতাম না।
‘নোয়াখালী রাইডার্স-এনআরজেড’ এর টিম লিডার রাহাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংগঠনটি কেবল রাইডিং ও স্ট্যান্টে শুধু দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই নয়। একইসাথে কাজ করছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমাতে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও মানবিক কাজ। দেশের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ২০০০ বাইক নিয়ে বিজয় র্যালি করব এবং বাইক স্ট্যান্ট শো করব। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য লিফলেট বিতরণ করব।
নোয়াখালীতে মোটরবাইক স্ট্যান্ট করার মতো উপযোগী কোনো সড়ক বা প্লে-গ্রাউন্ড না থাকায় তারা জেলা জজকোর্ট সড়কটিতইে তাদের অনুশীলন করে। সকাল ৮টার পর সড়কটি ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় খুব ভোরে সূর্যদোয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তাদের প্রতিদিনের অনুশীলন। ব্যস্ত সড়কে এ ধরনের অনুশীলনে পথচারীদের সমস্যা হয়। তাই তারা চান এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্লে-গ্রাউন্ড। কারো সহযোগিতা না পাওয়ায় নিজ খরচেই তারা বাইক স্ট্যান্ট করে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, আগামীতে তাদের অনুশীলনের জন্য নির্দিষ্টস্থান বরাদ্দসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা ভালো কাজ করে তাদের পক্ষে জেলা প্রশাসন সর্বদা আন্তরিক। বাইকারদের অনুশীলনের জন্য আমাদের স্টেডিয়াম আছে। অন্য কোথাও তাদের পছন্দ হলে আমি তা ব্যবস্থা করে দিবো। আমরা চাই তরুণরা খেলাধুলায় মনোযোগী থাকুক।
হাসিব আল আমিন/আরকে