ছোট্ট একটি টংঘর। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে হাঁকডাক। এটা নিত্যদিনের চিত্র। তবে সন্ধ্যার পর দোকানে ভিড় বাড়তে থাকে। এ সময় একটু দম ফেলার ফুরসত পান না দোকানি। এই দোকান থেকেই মাসে আয় হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। চলে ১০ সদস্যের পরিবারের সংসার।

বলছিলাম দিনাজপুর পৌর শহরের মহারাজামোড় বটতলী এলাকার চায়ের দোকানি আব্দুল মালেকের কথা। মহাসড়কের পাশে মালেকের চা দোকানের খ্যাতি শহরজুড়ে। সকাল-রাত প্রায় সব বয়সী লোক চায়ের জন্য ভিড় করে তার দোকানে।

মালেক টি স্টোরের মালিক মো. মালেক সরকার প্রচার করতে চান না। তিনি প্রথমে ঢাকা পোস্টের ক্যামেরা দেখে কথা বলতে ও ছবি তুলতে নিষেধ করেন। কারণ জানতে চাইলে মালেক বলেন, দোকানের প্রচার করতে আমি চাই না। কারণ প্রচার করলে যেমন ভালো দিক আছে, আবার খারাপ দিকও আছে। তাই আমার দোকানের প্রচার আমি চাই না।

হাসতে হাসতে মালেক বলেন, আমি প্রতিদিন ৮০-১০০ কেজি দুধের মালাই চা বিক্রি করি। প্রচার করলে তো আরও বেশি কাস্টমার আসবে, তখন এত মালাই চায়ের সরবরাহ কীভাবে করব? তাই প্রচার করতে চাই না। যে দুই টাকা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার চালাতে চাই। 

প্রতিদিন কতজন কাস্টমার আসেন জানতে চাইলে মালেক বলেন, ওভাবে বলতে পারব না। সব সময় ১৫-২০ জন কাস্টমার থাকেন। সন্ধাবেলা একটু বেশি হয়। চা বিক্রি করে মাসে আয় হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। চা বিক্রির টাকা দিয়ে শহরের বুকে জমি কিনে বাড়ি করেছি এবং চার ভাইয়ের সংসার চলে। তবে করোনার সময় দুই বছর ব্যবসা করতে পারিনি। পুলিশ বার বার দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। কই তখন তো সরকার বা প্রশাসনের কেউ কোনো সাহায্য করে নাই। ১০ সদস্যের পরিবারের সংসার কিভাবে চলেছে?

নিয়মিত চা খেতে আসেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম। সে ঢাকা পোস্টকে বলে, দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে সুস্বাধু চা পাওয়া যায় মহারাজার মোড়ে মালেক ভাইয়ের দোকানে। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই এখানে চা খেতে আসি। আমরা ডানো আর মালাই চাটাই বেশি খাই।

দিনাজপুর পৌরসভার কর্মকর্তা আশরাফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শহরের পৌর মোড় থেকে দুধ চা খেতে এখানে প্রায়ই আসি। এখানকার চা এক কথায় অসাধারণ।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমু ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ভার্সিটির বন্ধুরা মিলে ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে এখানকার চায়ের অতুলনীয় স্বাদ নিতে আসি। এখানকার চা অন্য সব দোকানের থকে আলাদা। একবার খেলেই মুখে এর স্বাদ অনেক দিন লেগে থাকে।

অটোচালক রুহুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দিন শহরে অটো চালিয়ে সন্ধ্যার পর বাসায় যাওয়ার আগে মালেকের চা খাই। সন্ধ্যার পরে চা খেতে হলে সিরিয়াল নিতে হয়।

মালেকের ছোট ভাই আব্দুল বারেক বলেন, আমার বড় ভাইয়ের দোকান আমিসহ তিন ভাই কাজ করি। চায়ে টেস্ট আনার জন্য আলাদা কিছু ব্যবহার করি না। দুধ জ্বাল দিয়ে গাঢ় করে লিগার দেই। 

প্রসঙ্গত, দিনাজপুরের মালেক টি স্টোরের সুস্বাধু চা খেতে আসতে হবে দিনাজপুর শহরের চিরিরবন্দর বটতলী বাসস্ট্যান্ড অথবা মহারাজা মোড়ে। এখানে এসে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে মালেকের চা স্টোরটি দেখিয়ে দেবে।

মালেক টি স্টোরে সাত ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুধ চা ১৫ টাকা, মালাই চা প্রকারভেদে ৫০/৬০/৮০ টাকা, রঙ চা ৭ টাকা, ডানো চা ২৫ টাকা, হরলিক্স চা ২৫ টাকা, কফি ৪০ টাকা এবং ক্যাপাচিনো ৭০ টাকা।

এসপি