বাংলাদেশে যেভাবে সময় কাটছে একলিমার
৪০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একলিমা বেগম বাংলাদেশে এসেছেন। তাকে দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষজন ভিড় করছেন। সবমিলে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন একলিমা বেগম ও তার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল।
মরিয়ম বেগম নামে এক নারী বলেন, ৪০ বছর পর একলিমা ফিরে এসেছে জানতে পেরে তাকে দেখতে এসেছি। আমার মতো অনেক লোকজন আসছে।
বিজ্ঞাপন
একলিমা বেগমের ভাতিজা মোবারক হোসেন বলেন, আমার ফুফু ৪০ বছর পরে দেশে ফিরেছে। প্রতি মুহূর্তে লোকজন বাড়িতে আসছে। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন। লোকজন এত বেশি আসছে যে খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না আমরা। সবাই এসে ফুফুর সঙ্গে কথা বলছে। ফুফু বাংলা বুঝতে পারছেন কিন্তু বাংলা বলতে পারছেন না।
একলিমার পাকিস্তানের দ্বিতীয় পক্ষের বড় ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, বাংলাদেশের অনেক গল্প শুনেছি। তবে এখানকার মানুষ এত বেশি অতিথিপরায়ণ সেটা না আসলে জানতে পারতাম না। মাকে নিয়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঘুরছি। সব কিছু মিলে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। বাংলাদেশি খাবারগুলো বেশ মজাদার। নিত্য-নতুন খাবার খেতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। তাছাড়া অপরিচিত মুখগুলো দেখতে দেখতে সবাইকে এখন আপন লাগছে।
একলিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব সময় লোকজন আসছে। সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই লোকজন এসে ভিড় করছে। এভাবেই সারা দিন লোকজনের সমাগম থাকছে। কিছু কিছু মানুষকে চিনতে পারছি। পরিচিত মুখগুলো দেখতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছি। আগামী ২৫ দিন বাংলাদেশে থাকব, তারপর পাকিস্তান ফিরতে হবে। তবে যাতায়াত থাকবে বাংলাদেশে।
খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বলেন, একলিমা বেগম দীর্ঘ বছর পরে স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছে। বিষয়টি বেশ আনন্দের। এদিকে একলিমা বেগমের পাকিস্তান থেকে ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন দেখতে আসছে। মাকে ফিরে পেয়ে একলিমার তিন সন্তান অনেক খুশি।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের কোনো এক দিন হারিয়ে যান একলিমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পায়নি তার। অবশেষে চার মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান মেলে একলিমার। একলিমা বেগম (৬৫) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে ও তিন সন্তানের জননী। স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর পর পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালীতে খোঁজ মেলে তার। কিভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি বলতে পারেনি কেউ।
দীর্ঘ ৪০ বছর পর বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন তিনি। পরবর্তীতে একই দিন দুপুর ৩টায় সাতক্ষীরার তালা গঙ্গারামপুর গ্রামে পৌঁছায় একলিমা। তার সঙ্গে তার দ্বিতীয় পক্ষের বড় ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল এসেছেন। এত বছর পর একলিমাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত তার স্বজনরা। এলাকাবাসী তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়।
সোহাগ হোসেন/এসপি