দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার বেশির ভাগ সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। খানাখন্দের কারণে সড়কগুলোতে চলাচলের উপায় নেই। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে এসব সড়কে চলাচলরত যানবাহনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। আহত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবুও পৌর কর্তৃপক্ষের নজর নেই দাবি স্থানীয়দের।

উত্তরাঞ্চলের শিল্প ও ব্যবসা সমৃদ্ধ শহর হিসেবে খ্যাত সৈয়দপুর। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা, বিমানবন্দর, সেনানিবাস, ১০০ শয্যা হাসপাতাল, বাস টার্মিনাল, ছোট-বড় ৫ শতাধিক শিল্প-কলকারখানা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শতাধিক সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজসহ আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়। পৌরসভার বিগত বাজেটে উন্নয়ন খাতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারপরও সমৃদ্ধ এই প্রথম শ্রেণির পৌরসভার রাস্তাঘাটগুলোর চরম দশা।

সরেজমিনে শহরের অন্তত ১৫টি সড়কের বেহাল চিত্র দেখা গেছে। শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের মদীনা মোড়ে প্রায় ২০ ফুট এলাকাজুড়ে পিচ-পাথরের কার্পেটিং আর ইটের খোয়া উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। চরম ব্যস্ততম এই জায়গাটা একে তো ভাঙা, তার ওপর সব সময়ই নোংরা পানি জমে থাকে।

অন্যদিকে জিআরপি মোড় স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে রেলওয়ে কারখানাগামী সড়কের বেহাল দশা। এক কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ভেঙে চৌচির। গর্ত বা খানাখন্দ গুণে শেষ করা যাবে না। এক কথায় চলাচলের অযোগ্য সড়ক। যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটে চলাচল করাও দুষ্কর। তারপরও প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করছেন লোকজন।

একই অবস্থা শহীদ জহুরুল হক সড়কের। শেখ রাসেল চত্বর (কলিম মোড়) হতে বাঁশবাড়ি সাহেবপাড়া মিস্ত্রিপাড়া হয়ে বাইপাস পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩০টি স্থানে ভাঙা। কিছুদূর পর পরই খানাখন্দ। কোথাও কোথাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের নাগরিকদের যাতায়াতের প্রধান রাস্তা এটি। 

জনদুর্ভোগের আরেক ভীতিজনক পথ হলো শেরে বাংলা সড়ক। তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির তামান্না মোড় হতে বাইপাস সড়কের ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত করুণ অবস্থা। জেলা শহর নীলফামারীসহ ডোমার, জলঢাকা, ডিমলা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের রুট এটি।

এছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থাও সংকটাপন্ন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গোলাহাট থেকে সরকারপাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়কের রোস্তম মোড় হতে দারুল উলুম মাদরাসা মোড় হয়ে উপজেলা পরিষদ, শেরেবাংলা সড়কের এলএসডি মোড় হয়ে ধলাগাছ মোড়, বাঁশবাড়ি টালি মসজিদ থেকে সাদ্দাম মোড়, চাউলহাটি থেকে কাজীপাড়া মোড়, কিছুক্ষণ মোড় থেকে মহিলা কলেজ ও খেজুরবাগ মসজিদ হয়ে কয়ানিজপাড়া ও সরকারপাড়া সড়ক, বিজলি মোড় থেকে মুসলিম স্কুল, মুজার মোড় থেকে জামবাড়ি মোড়, আদানির মোড় থেকে জুম্মাপাড়া হয়ে বাইপাস, মিস্ত্রিপাড়া মন্দির রোড, নতুন বাবুপাড়া থেকে সৈয়দপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ, হাতিখানা বানিয়াপাড়া রোড, নতুন টিঅ্যান্ডটি অফিস থেকে বাঙ্গালিপুর নিজপাড়া হয়ে আনসার ভিডিপি অফিস রোড, নয়াটোলা মন্দিরের সামনে থেকে কালিমিয়া খানকা হয়ে বিএম কলেজ মোড়, গার্ডপাড়ার গির্জার দক্ষিণ মোড় থেকে রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের ও পেছনের রাস্তা।

বাঁশবাড়ি এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোচালক মুরাদ হোসেন বলেন, এমন খানাখন্দযুক্ত রাস্তায় নিরুপায় হয়ে গাড়ি চালাই। কিন্তু প্রতিদিনই কোনাে না কেনো ঝামেলায় পড়তে হয়। চাকা পাংচার বা স্প্রিং ভাঙা, লাইট ফিউজ, ব্যাটারি-মোটর সংযোগ সমস্যা হওয়া বা অন্য কোনো পার্টস নষ্ট হবেই। অনেক সময় ভাঙার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় হেলে গিয়ে অন্য গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগাসহ উল্টে যায়। এতে তো আরও সমস্যা।

নতুন বাবুপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষিকা কোয়েলিয়া বিশ্বাস বলেন, রাস্তাগুলো এতটাই খারাপ গাড়িতে চড়েও চলাচল মুশকিল। স্কুলে যাতায়াতের সময় গাড়ির ঝাঁকুনিতে হাড়-মাংস থেতলে যায়। সকাল-বিকেল যাতায়াত করায় ব্যথায় কাতর অবস্থা। তবুও কর্তৃপক্ষের নজর নেই। 

সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বলেন, বরাদ্দের অভাবে রাস্তার বড় সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প বাজেটে বেশ কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। যেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন সে সড়কগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এসব সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।

শরিফুল ইসলাম/এসপি