সরকারি জায়গা দখল ও কালভার্ট ভরাটের অভিযোগ

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় বালু দিয়ে সরকারি জায়গা দখল ও কালভার্ট ভরাটের অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার বিরুদ্ধে। জমি ও কালভার্ট ভরাট করে ফেলায় পানি প্রবাহ ও কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। পাশাপাশি কয়েক একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের খানদলী বাশতলা চৌরাস্তা মোড়ে নিজের মালিকানা জায়গা ভরাটের সঙ্গে সড়ক ও জনপথের (সওজ) সরকারি জায়গা ও পানি প্রবাহের জন্য নির্মিত কালভার্টটি (পূর্ব পাশ) বালু দিয়ে ভরাট করেছেন সৈয়দ আবুল বাশার। চলতি সপ্তাহে তার বালু ভরাটের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা চলছে। গত কয়েক বছর আগে পাথুরিয়া পার থেকে ডাসার পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ রাস্তাটি নির্মাণ করে। কিন্তু নিম্নাঞ্চল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই, ওই এলাকায় প্রতি বছর কয়েকশ একর কৃষি জমি প্লাবিত হয়। ফলে আশপাশের বাড়িঘর তলিয়ে যেতে থাকে এবং পানির চাপে রাস্তায় ফাটলের সৃষ্টি হয়। তাই সওজ বিভাগ মাদারীপুর বাশতলা মোড় সংলগ্ন একটি কালভার্ট নির্মাণ করে। এতে স্থানীয়রা সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পায়। 

কিন্তু কালভার্টটি ভরাট করায় আবারও কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে সবাই। কয়েকটি গ্রাম ও কয়েকশ একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানায় স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা  জানান, সে সব সময় ক্ষমতা দেখায়। রাজনীতি করলে জনগণের কথাও ভাবতে হয়। সরকারি জমি ভরাট করার তার কোনো অধিকার নেই। 

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, কালভার্টি যদি বালু দিয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে আগামীতে আমরা কীভাবে ইরি ধান রোপন করব? প্রশাসনের  সহযোগিতায় দ্রুত কালভার্টটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।  

রবিউল হাওলাদার বলেন, সরকারি জমিসহ অবৈধ ড্রেজার দিয়ে জায়গা ভরাট করা হলো। সরকারি প্রকল্পের কালভার্টের মুখ আটকে দিল। কেউ দেখলো না? কেউ কি দেখার নাই। যখন কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে পানির অভাবে, তখন কৃষক বুঝবে। তাদের তো কোনো ক্ষতি হবে না, হবে গরিবের। প্রশাসন নেতার নাকি জনগণের, তা এবার প্রমাণ হবে। 

কাজী বাকাই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য মিসেস রানু বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবৈধভাবে একজন সুবিধাভোগ করবে আর শত শত মানুষের অসুবিধা হবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কৃষকের কথা চিন্তা করে দ্রুত কার্লভাটের মুখ খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।

ওই ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা গোলাম মাওলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়ক ও জনপথের জমি ও কার্লভাটের মুখ বন্ধ না করার জন্য আমরা সৈয়দ আবুল বাশারকে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছিলাম। তিনি রাতের অন্ধকারে এসব কাজ করেছেন। যেহেতু সড়ক ও জনপথের জমি তাই এই বিষয়ে তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কারো কালভার্টের মুখ বন্ধ করা ও অবৈধভাবে সরকারি সম্পতি ভরাট করার এখতিয়ার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আমার জমি ভরাট করছি। আশপাশের অনেকেই তো সরকারি জমি ভরাট করেছে। পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু দিন পরে সব ভরাট হয়ে যাবে। আমার শত্রুরা বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি করছে। প্রশাসন দেখুক আমি সরকারি জমি ভরাট করেছি কিনা। তাদের জমি থাকলে ছেড়ে দেব। জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই তাদের অনুসরণ করে আমিও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছি। তাতে দোষের কিছু নেই। যেহেতু এখানে আমার জমি রয়েছে।

ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাকে  সরকারি জমি ছেড়ে দিয়ে কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা সচেষ্ট থাকব। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রাকিব হাসান/আরকে