সোলেমান আকনের বয়স ৭০ বছর। তিনি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি করতেন। ১০-১২ বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। অবসরপ্রাপ্ত এই চাকরিজীবী গত দেড় বছর ধরে হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায় জীবন পার করছেন। তালায় জং পরে গেছে। সন্তানদের দাবি মানসিক রোগে আক্রান্ত বাবার সুস্থতা সম্ভব নয় তাই এভাবে বন্দি জীবন পার করছেন সোলেমান আকন।

সত্তরোর্ধ্ব সোলেমান আকনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুর বাড়িয়া গ্রামে। সুযোগ পেলেই ঘর ছেড়ে দুই চোখ যেদিকে যায় চলে যান। তাই পরিবারের সদস্যরা তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। গত দেড় বছর থেকে তার হাত থেকে তালা খোলা হয়নি।  

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোলেমান আকনের পাঁচ ছেলে। তবে তার দেখশোনা করেন বৃদ্ধা স্ত্রী রাশিদা বেগম। ছেলেরা তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকেন। সোলেমান আকনের সব ছেলেরাই স্বচ্ছল। এক ছেলে ইতালি বসবাস করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, সোলেমান আকন অনেক সম্পত্তির মালিক। তা সত্ত্বেও সঠিকভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। সম্পত্তি ভোগের আশায় সন্তানরা তার বাবাকে ঠিকমত চিকিৎসা করাচ্ছে না। ওষুধ কিনে দিচ্ছে না। 

সোলেমান আকনের সেজ ছেলে শাহিন আকন বলেন, ‘আমার বাবার সুস্থতার জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা বলেছেন বাবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যান বলে বাবাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। সম্পত্তি ভোগের আশায় বাবার চিকিৎসা করানো হচ্ছেনা বিষয়টি সত্য নয়। আমাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই সাধ্যমত বাবার সেবা করার চেষ্টা করে থাকি।’

বৃদ্ধ সোলেমানের স্ত্রী রাশিদা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গেলোবার এমন দিনে কেবল কাঁচা ধান দাইছে। মারাই আইছে। হ্যা মারাই আলাগো মারাই করতে দেবে না। পোলারা নিয়া হেরে আটকাইয়া রাখছে। ধানটান ভাইঙ্গা গ্যাছে হেইআর পর হেরে বাইর করছে। ঢাকা নিছি, বরিশাল নিছি বারডেম হাসপাতালে নিছি, পপুলারে নিছি, পিজিতে নিছি কোনতায় কিছু হয়নাই। যাইগগা।’

তবে রাশিদা বেগমের বিশ্বাস হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা পেলে তার স্বামী সুস্থ হয়ে যাবেন।

বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. এ এস এম সায়েম বলেন, ‘সোলেমান আকনের স্টোরি শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো হয়নি। ঢাকায় নিয়ে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো হলে কিছুটা হলেও সুস্থ হতে পারেন।’

আরকে