চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের খিরোদিয়া গ্রামের মো. মাইনুদ্দিন (৪২) ও ফারজানা বেগম (৩০) দম্পতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের খিরোদিয়া গ্রামে ভাঙা বেড়া আর পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মাইনুদ্দিন-ফারজানা দম্পতি।  অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি এবং শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। বৃষ্টি হলে পানিতে ভেসে যায় ঘরের মেঝে। আর জোয়ার হলে ডুবে যায় পুরো ঘর। জোয়ার আর বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো রকম বেঁচে রয়েছেন তারা। 

স্থানীয়রা জানায়, মাইনুদ্দিন সারা বছরই মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। অনেক সময় দীর্ঘ দিন বাড়ি ফেরেন না। কোথাও কাজ করতে গেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কাজ শেষ করতে পারেন না। মাইনুদ্দিনের ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে আশেক এলাহী (১৩) তমরুদ্দি ইয়াহিয়া উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ছে। আশেক ২৩ পারা কোরআন শরিফ মুখস্থ করেছে। মেয়ে ফারহানা (১০) তমরুদ্দি আহমাদিয়া ফাজিল মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে এবং ফলি আক্তার (৯) ইয়াহিয়া উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় তৃতীয় জামাতের শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে ফজুলুল করিম (৭) ইয়াহিয়া উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় প্রথম জামাতের ছাত্র। ঘরে থাকার জায়গা নেই বলে তারা মাদরাসায় থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছয়জন মানুষ খুব কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে মাইনুদ্দিন মানসিকভাবে অসুস্থ। জোয়ার হলে তাদের ঘর তলিয়ে যায়। আবার বৃষ্টি হলেও ভেসে যায় ঘর।

মমতাজ নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোটের সময় ভোট দেই কিন্তু তারপর আর কেউ খবর রাখে না। জোয়ারে-বৃষ্টিতে ঘর ডুবে যায়, তারপর কেউ মাইনুদ্দিনরে সহযোগিতা করে না। 

বড় ছেলে আশেক এলাহী ঢাকা পোস্টকে বলে, আমরা চার ভাই-বোন মাদরাসায় পড়ছি। আমি ২৩ পারা কোরআন মুখস্থ করেছি। ঘরে থাকার জায়গা নেই বলে লিল্লাহ বোর্ডিং এ থাকি। মা-বাবাকে এক নজর দেখতে আসলেও ঘরে থাকার জায়গা নেই। একটু বিশ্রাম নিতে হলেও অন্যের ঘরে গিয়ে থাকতে হয়।

মাইনুদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী অসুস্থ থাকে। ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। যা আয় করে তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াচ্ছি। ঘরে বসার মতো ব্যবস্থা নেই। ঘর না করার কারণে স্বামীর ওপর রাগ করে বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ফিরে আসছি। 

ফারজানা বেগম আরও বলেন, জোয়ারের সময় ঘরে হাঁটু পানি উঠে। রান্নাঘরের চুলা পানিতে ডুবে যায়। না খেয়ে ঘরে বসে থাকতে হয়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কোনো খবর নেয় না। গরিবের দুঃখ শোনার কেউ নেই।

মো. মাইনুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি কাজ-কর্ম করতে পারি না। চার ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। যা আয় করি তা দিয়েই দিন এনে দিন খাই। ঘর নাই বলে বউ একবার তার বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। পরে ৪ সন্তানের কথা বলে বুঝিয়ে বাড়িতে এনেছি। আপনাদের সুযোগ হলে আমায় সহযোগিতা করেন। তাহলে আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

তমরদ্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রাশেদ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা অসহায় জীবনযাপন করছে এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তাদের ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলেন, দেখি কি করা যায়।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূমিহীনরা সরকারি ঘর পাচ্ছে। যদি পরিবারটি ভূমিহীন হয় তাহলে মুজিববর্ষের ঘরের আওতায় আনা হবে। আর যদি ভূমিহীন না হয় তাহলে আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে খোঁজ-খবর নিয়ে মুজিববর্ষের খ শ্রেণির আওতায় নিজ ভূমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

হাসিব আল আমিন/এসপি