প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বোঝাতে হেঁটে চাঁদপুরে এলেন ভারতীয় যুবক
প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান করে নিয়েছে। নিত্য প্রয়োজনে আমরা প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যবহার করছি। বর্তমানে আমাদের অসচেতনতার কারণে বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক দূষণের নতুন নতুন উৎস তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবের কারণে জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। তাই এর প্রভাব মুক্ত করতে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হেঁটে ভারতীয় যুবক রোহান আগারওয়াল ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে।
বয়স তার ২০ বছর। বাড়ি ভারতের নাগপুরে। বাবা-মা ও ছোট বোন আছে তার। স্থানীয় গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। বিশ্বব্যাপি প্লাস্টিকের ভয়াবহতার ধারণা দিতে পরিবেশ রক্ষায় নিজ দেশের ২৭টি রাজ্যে হেঁটে তিনি এখন বাংলাদেশে। বিশ্বের ১৫টি দেশে যেতে চান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম বাংলাদেশের আসেন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন রোহান। তারপর পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে বেশ কয়েক জেলায় ঘুরে চাঁদপুর আসেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রোহান আগারওয়াল বলেন, দুই বছর আগে এই যাত্রা যখন শুরু করেন তিনি। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গার তীর থেকে শুরু হয় তার হাঁটা। সেখান থেকে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ শেষ করেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর থেকে চাঁদপুরে আসেন তিনি। পরে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেন। রোববার সকালে তিনি চাঁদপুর কালেক্টরেট স্কুল ও কলেজ, চাঁদপুর আল আমিন স্কুল ও কলেজসহ দিনব্যাপি কর্মসূচি পালন করেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সর্ম্পকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করেন। ইতোপূবে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলা ভ্রমণ শেষ করেছেন। এরপর আগামীকাল কুমিল্লা, ঢাকা, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রোহান বলেন, ৮০৫ দিনের এই যাত্রায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছি। পুরোটাই হেঁটে কিংবা অন্য কারও গাড়িতে লিফট নিয়ে চলেছি। এ পৃথিবী শুধু মানুষের বসবাসের জন্য নয়। প্রাণী-উদ্ভিদেরও। তাই পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়েছি, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গিয়েছি। সবাইকে বলেছি পরিবেশ রক্ষার জন্য। হাঁটছি এবং ঘুরছি, পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছি। পরিবেশ সংরক্ষণ করা না গেলে এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
রোহান এই যাত্রায় ১৫টি দেশ যেতে চান। বাংলাদেশের পর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় যাবেন তিনি।
চাঁদপুরের স্থানীয় যুবক নাজমুল হাসান বাঁধন তাকে চাঁদপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচয় করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহান ভারত থেকে হেঁটে এসেছে। তার সারাবিশ্বে হেঁটে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা। সে চায় বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত করার জন্য প্লাস্টিক বোতল, পলি বর্জন করা। তাই সে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতন হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। তার বয়স মাত্র ২০ বছরের মতো। এতো কম বয়সে তার এই চিন্তা চেতনা দেখে বাংলাদেশের যুব সমাজ উৎসাহিত হবে। তার জন্য শুভ কামনা ভালবাসা রহিল।
চাঁদপুর আল আমিন স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষক জানান, ভারত থেকে হেঁটে বাংলাদেশে রোহান আগারওয়াল এসেছে। তার পরিকল্পনা প্লাস্টিক বোতল, পলিথিনের অপব্যহারের সর্ম্পকে বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায়। তাই সে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে পলিথিনের অপব্যবহার কীভাবে রোধ করা যায়। সেই লক্ষে সে কাজ করছে। আজ আমাদের চাঁদপুর আল আমিন একাডেমিতে এসে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা সবাই পলিথিন অপব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। এবং রোধ করব।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুল রহমান জুয়েল জানান, রোহান যে বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে আমরা বলি এটি একটি আন্তর্জাতিক (গ্রোবাল) ইস্যু। এটি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাগুলোও কাজ করছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমাদের দেশেও প্লাস্টিক নিয়ে সরকারিভাবে এর ব্যবহার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। আমাদের ও বিশ্বব্যাপি জনগণের মধ্যে সচেতনার অভাব আছে। এবং সেটি শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে। রোহান ভারত থেকে এসেছে সেখানে এটার ভয়াবহ প্রভাব আছে। সে ২০ বছর বয়সের একজন তরুণ। সে এই ইস্যুটাকে সামনে রেখে হেঁটে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাইবেরিয়াতে যাওয়া। আমি মনে করি এজন্য সাহসের প্রয়োজন।আর একটা বড় জিনিস হচ্ছে কথা রাখা প্রয়োজন। ওর বয়সে যে কমিটমেন্ট ধারণ করেছে আমি মনে করি এটি দেখে অন্যদের মধ্যেও এটার একটা ভালো প্রভাব পড়বে। আমরা অবশ্যই তার সাফল্য কমনা করি।
আনোয়ারুল হক/এমএএস