কুয়াকাটায় ঘরহারাদের কান্না, আকাশের নিচে আড়াই হাজার মানুষের বাস
সাগরকন্যা খ্যাত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় তৃতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্যের নেতৃত্বে রোববার (১৩ নভেম্বর) বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ৩৯৫টি ঘর উচ্ছেদের আওতায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে কুয়াকাটায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। আগে পুনর্বাসন নিশ্চিত করে উচ্ছেদ চালানোর দাবি জানিয়েছেন বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা।
বিজ্ঞাপন
কুয়াকাটা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোয় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। দুই-আড়াই হাজার মানুষ ঘরের বাইরে রাত কাটিয়েছে। জনগণের দাবি আগে পুনর্বাসন করা হোক। নয়তো মানুষ যাবে কোথায়?
সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিল মোসাম্মৎ রেহানা বলেন, উচ্ছেদ হচ্ছে অনেক পরিবারের। এদের আগে পুনর্বাসন করা উচিত ছিল। জনগণ সবাই আমাদের কাছে ছুটে এসেছে। কিন্তু কী বলবো? আমার নিজের ঘরও সরিয়ে নিচ্ছি। কিছুটা সময় দিলে মানুষ ভালোভাবে যেতে পারতো। এখন সবাই অসহায় হয়ে পড়েছে।
বাসিন্দা নাসরিন বলেন, আমার কিছু নেই। অন্যের ঘরে ছিলাম। হঠাৎ জানলাম ঘর ছেড়ে যেতে হবে। এখন আমরা কি করব বুঝতেছি না। আমার মাথা গোঁজার কোনো জায়গা নেই।
আছিয়া বলেন, সরকার আমাদের জমি থেকে নামিয়ে দেবে ভালো কথা। কিন্তু আমাদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দিক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে উচ্ছেদ চালিয়ে অবৈধ দোকান, ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে অর্ধশতাধিক গাছ। আর সকাল থেকে পূর্ব দিকের বাসিন্দারা নিজের ঘর খুলে রাখছেন। কিন্তু ঘরগুলো খুলে কোথায় নিবেন তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। ফলে বেড়িবাঁধের ঢালে তৈজসপত্র, ঘরের ছাউনি, বেড়া নিয়ে বসে আছেন।
পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রশাসন মনে করছেন বেড়িবাঁধের বাইরে কোনো বাসিন্দার বসত থাকবে না। যারা ওখানে ছিলেন তারা প্রায় ৭০ বছর ধরে ওখানে ছিলেন। এদেরকে সরকার পুনর্বাসন করবেন। কিন্তু কখন কিভাবে করবেন সেটা আমি বলতে পারছি না।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন ১নং খাস খতিয়ানের জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে গত তিনদিন ধরে। যারা উচ্ছেদের আওতায় এসেছে তারা ভূমিহীন হলে অবশ্যই পুনর্বাসন করা হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে