শত বছরের পুরোনো গাড়ি নিয়ে পাবনায় ইউরোপের পর্যটক দল
প্রায় শত বছরের পুরোনো বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ১৬টি গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছেন ইউরোপের একদল পর্যটক। কয়েকটি জেলা ঘুরে তিন দিন পর বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে তারা উত্তরের জেলা পাবনায় পৌঁছান। এখানে এক রাত অবস্থান করে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে তারা যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত রোববার (৬ নভেম্বর) সকালে ভারতের ডাউকি সীমান্ত হয়ে সিলেটের তামাবিল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বাংলাদেশ আসেন ৪৩ জনের বিদেশি পর্যটক দল। এরপর মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে তারা গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে এসে পৌঁছান। সারাহ রিসোর্টে রাত্রিযাপন শেষে বুধবার সকালে তারা পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পাবনায় এক রাত থেকে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন এই পর্যটক দল। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে কলকাতার যাবেন তারা। ভ্রমণকালে বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, শিল্প, সংস্কৃতি, খাবারের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন তারা। পাবনার মানুষের আচার-আচরণ, প্রাকৃতিক রুপ, রস, আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে শহরতলীর সদরের দোগাছী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার রুপকথা ইকো রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকর মাঠে বাহারি রং আর নামিদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এক নম্বর লেখা গাড়িটির বয়স ৮৮ বছর। আর দুই নম্বর লেখা গাড়িটির বয়স ৭০ থেকে ৭২ বছরের ওপরে। বয়স অনুসারে গাড়িগুলোকে এভাবে সাজানো আছে। অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই গাড়িগুলো এত বছরের পুরোনো।
নানা ডিজাইন আর বাহারি রঙের দীর্ঘ বছরের পুরোনো ১৬টি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে তিনটি দেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন ইউরোপের এক দল পর্যটক। এই দলে রয়েছেন মোট ৪৩ জন। যাদের সবার বয়সও কমবেশি ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্যসহ অন্তত ৯টি দেশের নাগরিক নিজেদের খরচে এই ভ্রমণ বের হয়েছেন।
পর্যটক দলের কো-অর্ডিনেটর ও দ্য জার্নি ওয়ালেটের সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম কার র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। বেলজিয়ামের নাগরিক ব্রুনো বাংলাদেশে এসে আমাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিশেষভাবে পারমিশন নেওয়া হয়। আমরা বাংলাদেশে তাদের আয়োজনে সহযোগিতা করছি। তারা বিভিন্ন দেশেই ভ্রমণ করে থাকেন। এবার তারা ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত ৬ নভেম্বর সকালে সিলেটের তামাবিল থেকে আমরা তাদে রিসিভ করে নিয়ে আসছি। আগামীকাল ১১ নভেম্বর ভারত যাবেন তারা।
তিনি বলেন, গত ২১ অক্টোবর থেকে ভারত ভ্রমণ শুরু করেন তারা। তারপর ভুটান ভ্রমণ শেষ করে গত ৬ নভেম্বর সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন। তারপর কয়েকটি জেলা ঘুরে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পাবনায় আসেন তারা। পাবনার রুপকথা ইকো রিসোর্টে ভাড়া নিয়ে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। নিজেদের প্রিয় ও পুরোনো গাড়ি নিজেরাই চালিয়ে ভ্রমণ করছেন তারা। গাড়িগুলোর খুব যত্ন নেন তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ৯ জন সাপোর্টিং স্টাফসহ গাড়ি মেরামতের সকল সরঞ্জাম। যে কোনো সমস্যায় তাৎক্ষণিক মেরামত করা সম্ভব। যে কারণে এখনো গাড়িগুলো চলছে। তাদের সঙ্গে আইসিইউ বেড সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। যাতে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়। তাদের সঙ্গে চিকিৎসকও রয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিজেদের চিকিৎসক দিয়ে থাকেন।
রিয়াজ আহমেদ জানান, গাড়িগুলো ব্রাসেলস থেকে প্রথমে জাহাজের মাধ্যমে কলকাতা পোর্টে আনা হয়। সেখানকার এজেন্ট গাড়িগুলো খালাস করে প্রয়োজনীয় দেখভালের পর নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে যান। তারপর পর্যটক দলের সদস্যরা নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণে বের হন। আর ভ্রমণের পথে পথেই মানুষ, প্রকৃতি, শিল্প, সংস্কৃতি, খাবারের সঙ্গে পরিচিত হন তারা।
আলাপ হয় পর্যটক দলের বেলজিয়াম, পর্তুগাল ও জার্মানির কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, ভারত ও ভুটান ভ্রমণ শেষে বাংলাদেশে এসে মুগ্ধ তারা। এদেশের মানুষ, প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ, সংস্কৃতি ও আতিথেয়তায় খুশি হয়েছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করলেও, বাংলাদেশে প্রথম এসেছেন। ইউরোপের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। এখানকার মানুষ খুব বন্ধুবৎসল। আচার- আচরণ খুবই চমৎকার। এদেশের খাবারও মজাদার।
পাবনার বিষয়ে তারা বলেন, পাবনা খুব সুন্দর একটি জেলা। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। এখানকার পরিবেশটাও দারুন। খাবারের মানও ভালো।
রুপকথা ইকো রিসোর্টের অপারেশন অফিসার শফিকুল আলম বলেন, গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ইউরোপের একদল পর্যটক এই রিসোর্টে আসেন। দিনভর আনন্দ উল্লাস করেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুড়ে বেড়ান। এরপর রাত্রিযাপন করে আজ সকালের নাস্তা করে যশোরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছেন। তাদের আচরণ খুবই ভালো ছিল। যা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব হয়েছে তাদের সার্ভিসটা সুন্দরভাবে দিয়েছি। আমাদের ভিআইপি রুমগুলোই তাদের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এখানকর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ খুবই চমৎকার ছিল। তারাও অমাদের আচরণে ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন। এরপর তারা বাংলাদেশ ভ্রমণে আসলে আমাদের পাবনায় আসার কথা জানিয়েছেন।
আরএআর