গণসমাবেশের আগে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ
ফরিদপুরে আগামী শনিবার (১২ নভেম্বর) বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশের আগে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার ও নারীদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাদের।
গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ফরিদপুর শহর, ফরিদপুর সদরের গেরদা, কৈজুরি, ঈশান গোপালপুর, মাচ্চর ও কৃষ্ণ নগর ইউনিয়ন এবং নগরকান্দা উপজেলার নগরকান্দা পৌরসভা, তালমা ও লস্করদিয়া ইউনিয়নে পুলিশ এ অভিযান চালায়।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি নেতারা বলেছেন, গণসমাবেশের আগে পুলিশ অভিযানের নামে বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে। নেতাকে না পেয়ে ভাইকেও গ্রেপ্তার করছে, নারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে ও ওয়ারেন্ট আছে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের এ অভিযান গতানুগতিক। নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি বলেও জানায় পুলিশ।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের (৫২) বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। মিজানুর রহমানকে না পেয়ে তার ছোট ভাই বিএনপিকর্মী মোনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকা থেকে মোনায়েম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চাঁদাবাজির একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে। রাত সোয়া ২টার দিকে ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নূরুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িতেও অভিযান চালায় পুলিশ।
নূরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে তার বাড়িতে বিএনপির একটি কর্মী সমাবেশ হয় সমাবেশ সফল করার জন্য। রাতে তার বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। তিনি বলেন, পুলিশের অভিযানের সময় তিনি বাড়িতেই ছিলেন তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে টেকনিক্যালি বের হয়ে যান।
সদরের গেরদা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাবলু, কৈজুরি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য শাহজাহান মোল্লা ও কৃষ্ণ নগর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা লুৎফর রহমান, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চক ভবানীপুর গ্রামের কালাম শেখ ও মাচ্চর ইউনিয়নের শের শাহ এর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে আত্মগোপনে থাকায় তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
ওইদিন রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ নগরকান্দা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান, নগরকান্দা পৌরসভার চৌমুখার মহল্লার কবীর মৃধা, শাহদাত মৃধা, টুলু মিয়া, কলেজ বালিয়া মহল্লার মামুন মুন্সী, তালমা ইউনিয়নের বিএনপি সদস্য দক্ষিণ শাকপালদিয়া গ্রামের আবতার আলী, লস্করদিয়া ইউনিয়নের ওয়াহাব সর্দার, একই ইউনিয়নের কল্যাণপট্টি গ্রামের হারুণ মাতুব্বকরকে গ্রেপ্তার করে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, গণসমাবেশের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করছে, তল্লাশি করছে, নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।
তবে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী হিসেবে কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরকান্দার বিভিন্ন জায়গা থেকে যে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা সবাই ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
এ গণসমাবেশের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলের সহযোগী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গণসমাবেশের আগে অতি উৎসাহী পুলিশরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা পুরোনো ওয়ারেন্ট তামিল করার নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন। নগরকান্দায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রাতে জেলা ও মহানগর বিভিন্ন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদান হোসাইন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি করার রেকর্ড আছে পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে তাদের বাড়িতে গেছে, গ্রেপ্তার করেছে, তল্লাশি করেছে। এ সময় কোনো নারীর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই।
জহির হোসেন/এমএ