খুমেক হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগী, ফ্লোরেই চিকিৎসা
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল। জরুরি বিভাগের সামনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই দেখা যায় বারান্দার ফ্লোরের দুই পাশে অসংখ্য মানুষ শুয়ে-বসে রয়েছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, তারা আড্ডা বা খোশগল্পে মজে আছেন। কিন্তু কাছে যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সেখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ পাটি ও কাঁথা বিছিয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শুধু দ্বিতীয় তলায়ই নয়, গোটা হাসপাতালের বারান্দা-জানালার পাশে রোগী ও তার স্বজনরা এভাবেই অবস্থান নিয়ে সেবা গ্রহণ করছেন।
রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে শয্যা নেই। ফলে বাধ্য হয়েই মেঝেতে অবস্থান নিতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে অবকাঠামো আর শয্যা সংকটে বাধ্য হয়েই রোগীদের ফ্লোরে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসকরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমনই কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা রোগীর স্বজন মনোরঞ্জন রায় বলেন, আমি রোগীকে ভর্তি করার পর বেডের আবেদন করেছিলাম, কিন্তু বেড পাইনি। অনেক রোগী আছে, কোনো বেড খালি নেই। অনেক রোগী বারান্দায় খোলা স্থানে রয়েছে। বেডের ব্যবস্থা হলে ভালো হতো।
ফকিরহাট থেকে আসা খলিল সরদার বলেন, রোগী নিয়ে এসেছি, বেড পাইনি। বারান্দায় রয়েছি। বেড পেলে আমাদের সুবিধা হতো। খুব কষ্টে আছি। অন্তত দুইজন মানুষ থাকতে হয়। বারান্দার আগা-মাথা দুইপাশেই মানুষ, মধ্য দিয়ে হাঁটা-চলা করতে হচ্ছে। এভাবে কষ্টে কোনো রকম দিন কাটছে। ঘুমাতে পারছি না, আমরা রোগী হয়ে যাচ্ছি। ভালো মানুষও রোগী হয়ে যাচ্ছে। কী করে থাকবো? চলেও যেতে পারছি না। ডাক্তাররা সেবা দিচ্ছেন, কিন্তু তাতে কী? ভালো মানুষও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের চিকিৎসক সিহাব হোসেন বলেন, রোগীদের বেডের অবশ্যই দরকার। এখানে বিভিন্ন রোগী আছে। স্ট্রোক ও জ্বরের রোগী থাকে। নিচেতো এসব রোগীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সম্ভব নয়। তারপরও সমস্যা আরও আছে। এখানে বেশিরভাগ মানুষইতো স্বল্প আয়ের মানুষ আসে। ভর্তি হওয়া রোগীদের বেডের জন্যই খাবার বরাদ্দ থাকে। এছাড়া পাশের রোগী দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে বমি করে দিয়েছে। এতো রোগীর জন্য তো পর্যাপ্ত আয়া-বোয়াও নেই। তারা পরিষ্কার করলেও রোগীকে ১০-১৫ জন দেখতে আসে। তারাও তো অপরিস্কার করছে। এভাবে আসলে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বেড বাড়ানো প্রয়োজন। বেড বাড়লে অবশ্যই রোগীদের জন্য সুবিধা হয়।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি মাল্টিপারপাস ও মাল্টিসেক্টরাল হাসপাতাল। আশপাশের ১৩টি জেলার রোগী এখানে আসে। যার কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ১৫০০ ঊর্ধ্বে রোগী থাকছে। অর্থাৎ ৩০০ শতাংশের বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছি। আমাদের সকল রোগীকে বেডে সংকুলান করতে পারি না, যার কারণে কিছু রোগী সবসময় ফ্লোরে থাকছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বেডের অভাবে রোগী ফ্লোরে রাখছি। কিন্তু আমরা কাউকেই চিকিৎসা বঞ্চিত করছি না।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতাল। এখানে খুলনা ছাড়াও পিরোজপুর, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জের রোগী আসেন। কোনো রোগীকেই কিন্তু ফেলে দেওয়ার নয়। আমাদের সব রোগীকেই ভর্তি করতে হয়। সবারই সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। জনবল কম ও অবকাঠামো সমস্যা। রোগীরা বারান্দায়-মেঝেতে শুয়ে আছে। এটাতো আমাদের কাছেও ভালো লাগে না। সে জন্য আমরাও খুব কষ্টের মধ্যেই আছি। ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন, স্টাফরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যাতে আমরা সবসময় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যেতে পারি।
রবিউল হাসান আরও বলেন, হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার, কিন্তু সবসময় ১৫০০ এর কাছাকাছি রোগী থাকে। এতো বিপুল রোগী আমাদের রাখার জায়গাও নেই। সে জন্য আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এর আনুসাঙ্গিক যা যা আছে সেই সব বাড়াতে হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছি। প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এখানে আরও ১০৬০ বেড বাড়ানোর নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ১৫০০ এর বেশি শয্যা আমাদের হবে। আমাদের ৪৬০ বেডের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে। আবার ১০০ বেডের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু হচ্ছে। তখন আরও আমরা সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো। একইসঙ্গে সেবার মান আরও ভালো হবে। বেশি রোগীকে আমরা সেবা দিতে পারবো।
আরএআর