রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) নির্বাচন আগামী ২৭ ডিসেম্বর। পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠছে পুরো নগর। রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল, স্লোগান আর শোডাউনে উচ্ছ্বসিত ছিলেন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।

বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে নাগরিক সমাবেশ করে পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানানো হয়।

সন্ধ্যায় নগরীতে বিশাল মোটরসাইকেল বহর নিয়ে নির্বাচনী শোডাউন করেন রংপুর সিটির বর্তমান মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। শোডাউন থেকে চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও মোস্তফাকে নির্বাচিত করতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির নেতারা। এ সময় মেয়র নগরবাসীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমার সময়ে নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্ধিত এলাকাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এবার কাজ করা হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং জনসেবা বন্ধ ছিল না। যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান পরিষদ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার বিশ্লেষণে এগিয়ে আছে। এ কারণে আমি মনে নগরবাসী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবারো আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

এদিকে মোটরসাইকেল শোডাউনটি নগরীর কারমাইকেল কলেজ রোড লালবাগ এলাকা থেকে শুরু  হয়ে পার্কের মোড়, মডার্ন মোড়, দর্শনা, টার্মিনাল রোড, ধাপ চেকপোস্ট, মেডিকেল মোড়, বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়, ডিসির মোড়, কাচারী বাজার, সিটি বাজার, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি, কামাল কাছনা, সাতমাথা, মাহিগঞ্জ, তাজহাট, স্টেশন বাজার, শাপলা চত্বর, কলেজ রোড এলাকা ঘুরে কারমাইকেল কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এতে প্রায় দেড় হাজার মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি পিকআপ ও প্রাইভেটকারে করে জাতীয় পাটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন। 

শোডাউনে অংশ নেন রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, সহসভাপতি লোকমান হোসেন, জাহেদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ প্রমুখ।

অন্যদিকে রংপুর মহানগরীর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি করপোরেশন রংপুর। এই সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন বিচ্ছিন্নভাবে করলে সেই উন্নয়নের সুফল নাগরিকরা পাবে না বরং নাগরিক দুর্ভোগ বাড়বে। এজন্য চাই একজন নগরবিদ দিয়ে শত বছরের জন্য পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনার আলোকে উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সুফল পাবে।

তিনি আরও বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে এখনই ভাববার সময়। কেন না, আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে আমাদের যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত, পরিচ্ছন্ন, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পরিকল্পিত নগরী গড়তে হবে।

এদিকে রসিক নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণার আগেই সরগরম ভোটের মাঠ।  প্রচার-প্রচারণাসহ চলছে সভা-সমাবেশ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নগরজুড়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও স্টিকার লাগিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।

হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এছাড়া খেলাধুলা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন কেউ কেউ। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই পাড়া-মহল্লায় খণ্ড খণ্ড মিছিলও করছেন প্রার্থীদের সমর্থকরা।
 
এবারের নির্বাচনে কারা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা।
এখন পর্যন্ত প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা।  

প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবারের নির্বাচন। তবে পূর্ণাঙ্গ তফসিল আগামী ৭ নভেম্বর ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন হয় ২০১২ সালের ২৮ জুন। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে এ সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার আছে চার লাখের বেশি। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর