যশোর সদর উপজেলার সিরাজসিংগা গ্রামের আব্দুর সাত্তারের মেয়ে মিনা খাতুন (২০)। মিনার দুপায় অকেজো, জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। তবুও থেমে থাকেনি তার শিক্ষা জীবন। রোববার (৬ নভেম্বর) সকালে যশোর সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারা।

অপরদিকে একই কেন্দ্রে মায়ের ঘাড়ে ভর করে পরীক্ষা দিতে এসেছেন আব্দুল মজিদ সরদারের মেয়ে তাহমিনা (১৯)। তার জন্ম থেকেই মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় নেই।

দুজনই যশোর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত সময়ের থেকে ২০ মিনিট বেশি সময় ধার্য করেছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই দুই শিক্ষার্থীকে তাদের মা পরীক্ষার হলে নিয়ে এসেছেন। একজনকে কোলে, অন্যজনকে ঘাড়ে ভর করিয়ে নিয়ে এসেছেন। ঘণ্টা বাজতেই মিনা হামাগুড়ি দিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন। তহমিনাকে তার সহপাঠীরা ঘাড়ে ভর করিয়ে আসনে বসিয়ে দেয়। 

মিনার বাবা পেশায় একজন ডাব বিক্রেতা। ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করে তার পড়ালেখা এবং সংসারের খরচ চালান। তহমিনার বাবা কৃষিকাজ করে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুজনেরই স্বপ্ন বড় হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট হবেন। 

মিনা বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী, হাঁটতে পারি না। হামাগুড়ি দিয়েই চলাফেরা করি। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই, আমার স্বপ্ন একজন ম্যাজিস্ট্রেট হব। কলেজের স্যার আমাদের দুজনকে অনেক সহোযোগিতা করেছেন। আমাদের বোর্ড ফিস, যাতায়াত খরচ তিনিই বহন করেছেন।

হামাগুড়ি দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকছেন মিনা

 

অপরদিকে তহমিনা বলেন, আমার কোমড়ে মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় নেই। তবুও আমি জীবনে হার মানতে চাই না। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই এবং আমাদের দুজনের স্বপ্ন ম্যাজিস্ট্রেট হব।

মিনার মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমার মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমার স্বামী একজন ডাব বিক্রেতা। আমরা স্বামী-স্ত্রী সংগ্রাম করে আমাদের সন্তানকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি মিনা প্রতিবন্ধী হয়েও একদিন তার স্বপ্ন পূরণ করবে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের সহোযোগিতা কামনা করছি।

যশোর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ ড. গৌর চন্দ্র বলেন, মিনা ও তহমিনা আমার কলেজের ছাত্রী। তারা দুজনেই অনেক মেধাবী। সবসময় তাদের সহযোগিতা করে এসেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবারও তারা ভালো ফলাফল করবে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই তাদের দিকে সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময়সহ বোর্ড কর্তৃক সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা কেন্দ্র যশোর কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক হোসেন শিম্বা। তিনি বলেন, এ দুই শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা বোর্ড অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি ধার্য করেছে। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তারা যেন সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।'

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে