সেই প্রাইভেট কারে বিড়াল রেখে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন
চলতি বছরের ১৭ আগস্ট গাজীপুরের কামাড়জুরি এলাকার বাসিন্দা টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার (৩৫) প্রাইভেট কারে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। পরদিন (১৮ আগস্ট) ভোরে প্রাইভেট কার থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক বিভাগ কাজ শুরু করেছে।
প্রাইভেট কার থেকে নিগর্ত বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবু আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তদন্তের পরই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু রহস্যের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন গাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম হোসেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এটি আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেলেই বিষয়টি আমরা আরও নিশ্চিত হতে পারবো। একটি বিড়াল দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পুলিশ প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। তবে এখনো ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
ওসি ইব্রাহীম হোসেন বলেন, শিক্ষক দম্পতি যে প্রাইভেট কারটি ব্যবহার করেছিলেন, সম্প্রতি সেটিতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি দুর্বল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিড়ালটি অসুস্থতা বাড়তে বাড়তে নুয়ে পড়ে। শিক্ষক দম্পতিও স্কুল থেকে রওনা দেওয়ার পর যে স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়, সেই দূরত্বটিও ছিলো অনুমানিক একই সময়ের। এই পরীক্ষা থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু বিষাক্ত গ্যাস থেকেই হয়েছে। এখন শুধু ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। যার কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন কবে আসবে সেটিও সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে এসব পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগে।
গাছা থানা পুলিশ জানায়, থানা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের ক্লু পাওয়া যায়নি। কোনোভাবেই তারা হত্যার শিকার হয়েছে- এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে আসেনি। এরই মধ্যে গাছা থানায় ইব্রাহীম হোসেন নামে এক নতুন ওসি যোগদান করেন। তিনি এক সময় সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি যোগ দেওয়ার পর মামলার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু দিন আগে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে পরীক্ষা করা হয়।
গাড়িতে বিড়ালটি রেখে এসি ছেড়ে বন্ধ করে দেওয়া হলে ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি নুয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে বিড়ালটির অসুস্থতা বাড়তে থাকে। পরে গাড়ির ও গাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়। এ ছাড়াও ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা।
শিহাব খান/আরএআর