প্রবাসজীবন ছেড়ে ৭৫ লাখ টাকায় মাল্টা বাগান করলেন যুবক
ছোট থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন লক্ষ্মীপুরের যুবক আজিম ভূঁইয়ার। প্রবাসজীবন ছেড়ে পাঁচ বছরের চেষ্টায় এখন তিনি একজন উদ্যোক্তা। তার বাগানে গাছ ভর্তি মাল্টা প্রমাণ করে তিনি সফল হয়েছেন। এই মৌসুমে তার বাগানে ফলন হয়েছে ২৫-৩০ হাজার কেজি মাল্টা। বর্তমানে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫ লাখ টাকা।
আজিম লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের ছেলে। প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি জেলার রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে সাড়ে ৮ একর জমিতে বাগানটি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, আজিম এইচএসসি শেষ না করেই ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরি করতে যান। সেখান থেকে সাড়ে ৩ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ছোট বেলার স্বপ্ন পূরণ করতে ফলের বাগান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিবারের সহযোগিতায় চরলক্ষ্মী এলাকায় তোফায়েল আহমেদ ও আলী দরবেশের কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য সাড়ে ৮ একর জমি লীজ নেন।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু করেন ফলের চাষ। তিনি বাগানে মাল্টা, বরই, আম ও পেয়ারা গাছের চারা লাগান। এছাড়াও রয়েছে নারকেল, আপেল ও বাউকুল। আমের মধ্যে রয়েছে বারি-৪ ও হিমসাগর। আজিম এখন পরিবার নিয়ে বাগানেই বসবাস করেন। ছোট ভাই মোক্তার ভূঁইয়াসহ তিনি এখন বাগানটি দেখাশোনা করেন। তার বাগানে ১৫-২০ জন লোক প্রতিদিন কাজ করেন।
প্রতিদিনই তার বাগানে বিভিন্ন এলাকার মানুষ গিয়ে ভিড় জমান। ফরমালিন মুক্ত রসালো মাল্টা কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজির হন অনেকেই। কৃষি বিপণন কর্মকর্তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বাগানটির সম্পর্কে জানতে পারেন। এছাড়া জেলা শহর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার থেকেও অনেকেই বাগানটি দেখতে ছুটে যান।
আজিম জানান, বাগানটি শুরু করার সময় তার কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথমে মাল্টার চারা লাগালে তা নষ্ট হয়ে যেত। তখন তার প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। তবে তিনি থেমে যাননি। ক্ষতিকে অভিজ্ঞতা হিসেবে রুপ দিয়েই নিজের মত করে বাগানে গাছ লাগিয়েছেন। এখন যদি কেউ মাল্টা বাগান করতে চায়, সেক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চান।
চলতি বছর গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বাগানটি পরিদর্শনে যান। পরে কৃষি বিভাগ থেকে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থার আশ্বাসও দিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ৩ জন যুবক জানিয়েছেন, তারা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার ফেসবুকে বাগানটির ছবি ও ভিডিও দেখেছেন। এজন্যই তারা বাগানটি দেখতে এসেছেন। এটি অনেক বড়। এ ধরণের বাগান তাদের এলাকাতেও কোথাও নেই। নিজ হাতেই তারা গাছ থেকে মাল্টা সংগ্রহ করে খেয়েছেন।
আজিম ভূঁইয়া বলেন, স্বপ্ন অনেকটাই সফল হয়েছে। প্রায় ৭৫ লাখ টাকা এ বাগানে ব্যয় হয়েছে। পুরো টাকা উঠাতে অন্তত আরও কয়েক বছর কষ্ট করতে হবে। তবে আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ফলন হয়েছে। বাগানে যারা আসেন, তারা নিজ হাতেই গাছ থেকে মাল্টা সংগ্রহ করেন। এখানে কোন ফলেই ফরমালিন বা বিষাক্ত কোন কিছু ব্যবহার করা হয় না। কৃষি অধিপ্তরের কর্মকর্তা ড. জাকির হোসেন প্রায়ই বাগানে এসে খোঁজ নিয়ে যান। এবার মাল্টা বিক্রিতে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মনির হোসেন অনেক সহযোগিতা করেছেন।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় মাল্টা চাষ নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু কয়েকজন কৃষক মাল্টা চাষে সফল হয়েছেন। বর্তমানে জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। আজিম এবার প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন। গত বছর তারা ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পেরেছেন। তার বাগানে আম ও পেয়ারাও রয়েছে। সবমিলিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই আজিম লাভজনক অবস্থানে যাবেন বলে আশা করছি। বাগানটি বেকার তরুণদের জন্য আদর্শ।
তিনি আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাগানে পানির সমস্যা হয়। এতে সেচের জন্য ডিফ ইরিগ্রেশন সিস্টেম স্থাপন করে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলমান। এটাই তাদের বড় চাহিদা। আজিমসহ ৩ জনের নাম বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য প্রস্তাব করেছি। সকল কাগজপত্র ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি পরিশ্রমের মূল্যায়ন হিসেবে তারা কৃষি পদক পাবেন।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে