লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, এক দিনে ভর্তি ১০
লক্ষ্মীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ মৌসুমে ১০ শিশুসহ ১৩৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) সদর হাসপাতালে ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তিন শিশুসহ ১৪ জন রোগী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
এদিকে ডেঙ্গু রোধে এডিস মশা ধ্বংসে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়রের সঙ্গে সভা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত দুই দিন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের চক বাজার, উত্তর স্টেশন ও ফায়ার সার্ভিস এলাকায় মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, মশারি টাঙিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন। মশারির ভেতরে শুয়ে কেউ মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখছেন, কেউ ওয়াজ শুনছেন, কেউ আবার ঘুমাচ্ছেন। শিশুরা ঘুমালেও তাদের পাশে বসে রয়েছেন মা-দাদি-নানিসহ অন্যান্য স্বজনরা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডাবের পানি, মাল্টাসহ বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করতেও দেখা গেছে কয়েকজন রোগীকে।
এ সময় কথা হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবক আবদুল কাদের লাবিব ও সোহাগের সঙ্গে। তারা দুজনই ঢাকায় চাকরি করেন। সেখানেই তারা জ্বরে আক্রান্ত হন। বাড়িতে এসে সদর হাসপাতালে পরীক্ষা করালে তাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ৬-৭ দিন ধরে তারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আগের চেয়ে তারা এখন অনেকটা সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মশারির ভেতর শিশু আফরিন জাহান (৫), আবু তালহাকে (৫) ঘুমাতে দেখা যায়। আফরিন রায়পুর উপজেলার চরবগা গ্রামের আবুধাবি প্রবাসী বাবুল হোসেনের মেয়ে। দাদি কুসুম বেগমের কোলে তাকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ৭-৮ দিন আগে আফরিন জ্বরে আক্রান্ত হন। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা হয়েছিল। কিন্তু জ্বর ভালো হচ্ছিল না। সোমবার তাকে হাসপাতালে এনে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত তালহা সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ গ্রামের মিজানুর রহমান বারাকাতের ছেলে। তার পাশে নানি মাকছুদা বেগমকে বসে থাকতে দেখা যায়। কয়েক দিন জ্বরে আক্রান্ত থাকার পর সোমবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেন আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার বাড়ি সদর উপজেলার ফতেহ ধর্মপুর গ্রামে। গত বুধবার তিনি বরশি দিয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরছিলেন। পুকুরের চারপাশ আগাছায় ভরপুর ছিল। সেখানেই তাকে মশা কামড় দেয়। ওই রাতেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। সোমবার (৩১ অক্টোবর) তিনি হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তিনি আরও জানান, পুরো শরীর প্রচণ্ড ব্যথা করে। ব্যথায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। এ ব্যথা সহ্য করার মতো নয়।
জেলা শহরের আল হেকমা একাডেমি মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তৌহিদুর রহমান ইমতিয়াজ (১২) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। তার মা শারমিন আক্তার বলেন, মাদরাসার আবাসিকে থেকে ইমতিয়াজ পড়ালেখা করে। সেখানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কয়েকবার বমি করেছিল। জানতে পেরে তাকে এনে হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েছি। পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে এ মৌসুমে ১৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩২ জন সদর হাসপাতালে ও ৭ জন কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই ৬৯ জন রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সদর হাসপাতালে ৪ জন শিশুসহ ১৪ জন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবদুল্লাহ জায়েদ জানিয়েছেন, সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগী বেড়ে চলেছে। আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা লক্ষ্মীপুর আসত। কিন্তু এবার লক্ষ্মীপুরেই রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে জেলার প্রত্যেকটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। যাদের ছাদবাগান আছে তাদের অবশ্যই তা পরিষ্কার রাখতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হলে বাসায় বসে না থেকে হাসপাতালে চলে আসতে হবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। কালক্ষেপণ করলেই এ রোগ মারাত্মক হয়ে ওঠে। যারা সময়মতো হাসপাতালে আসে না, তারাই বেশি কষ্টে থাকেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১ মাসে সদর হাসপাতালে ৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন শিশুও ছিল। অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর থেকে রক্ষা পেতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, মশা নিধন কর্মসূচি আমাদের চলমান রয়েছে। পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিন মশক নিধন স্প্রে ছিটানো হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহম্মদ কবির বলেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ। মশার কামড় থেকে এ রোগটি ছড়ায়। মশা নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশা ধ্বংসে আমরা জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রের সঙ্গে সভা করেছি। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি