গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (৩০)। কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার। তবে ছোটবেলা থেকেই তার চিন্তাধারা ছিল ভিন্ন। পরের অধীনে চাকরি না করে হবেন উদ্যোক্তা। তাইতো ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে মাত্র চারটি গরু দিয়ে শুরু করেন খামার। মাত্র চার বছরে  তার খামারে গরুর সংখ্যা শতাধিক। 

শুধু তাই নয়, খামার থেকে উৎপাদিত দুধ দিয়ে ঘি, ছানা, দই, রসমালাই, রসগোল্লাসহ বাহারি মিষ্টি তৈরি করছেন। আর এসব মিষ্টি বিক্রি করছেন নিজের তিনটি শোরুমে। এখন তার খামার থেকে প্রতি মাসে আয় হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। সব মিলিয়ে এখন তিনি একজন সফল খামারি।

জানা গেছে, ঢাকা নিউ মডেল ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে এমবিএস পাস করে ২০১৪ সালে দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন গিয়াস উদ্দিন। পরের অধীনে চাকরি না করে নিজে কিছু করার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। ২০১৮ সালে নিজের ১০ একর পতিত জমিতে চারটি গাভি দিয়ে শুরু করেন দুগ্ধ খামার। এখন তার খামারে গরুর সংখ্যা প্রায় শতাধিক।

তার খামারের নাম অগ্র ডেইরি ফার্ম। প্রতিদিন খামার থেকে প্রায় ৩০০-৪০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। আর এই দুধ দিয়ে দই, ছানা, ঘিসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করে নিজের তিনটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছেন। খামার ও মিষ্টির শোরুম মিলে ১৫টি পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতি কর্মচারীর বেতন ১০-১৫ হাজার টাকা।

এছাড়া প্রতি বছর গাভিগুলো থেকে  জন্ম নিচ্ছে পঞ্চাশটিরও বেশি বাছুর। সেগুলো একটু বড় হলেই বিক্রি করে হচ্ছে বাড়তি আয়। সেইসঙ্গে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় নিজের খামারে পরম যত্নে পালন করা বিভিন্ন প্রজাতির ষাঁড় বিক্রি করে টাকা আয় করেন। চার বছরে গিয়াস উদ্দিন আবাসনসহ প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন।

গিয়াস উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার শুরুটা খুব মসৃণ ছিল না। আমি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে খামার করি।প্রথম দিকে অনেকে আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন। আমি শিক্ষিত হয়ে চাকরি ছেড়ে কেন খামার করছি? মাঝে-মধ্যে আমারও ভয় করত। এখান থেকে যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমাকে হারতে হবে। অনেক ঝড়-ঝাপটা গেছে আমার ওপর দিয়ে। তারপরও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই আজ আমি একজন সফল খামারি।

একজন সফল খামারি হিসেবে শিক্ষিত বেকারদের বলব, আপনারা যারা ভাবছেন একজন সফল খামারি বা উদ্যোক্তা হবেন তারা ধৈর্য ধরে লেগে থাকবেন, তাহলে সফলতা আসবেই। 

খামারের এক কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গিয়াস উদ্দিন ভাইয়ের খামারে প্রথম থেকেই কাজ করছি। চারটি গরু দিয়ে আজ একশোর বেশি গরুর মালিক তিনি। গিয়াস ভাই নিজে সময় পেলে খামারে এসে কাজ করেন। গরুগুলোকে লালন পালন করেন। এছাড়া খামারে কাজ করে আমাদের ১৫টি পরিবার বেঁচে আছে। গিয়াস ভাই ভালো মনের মানুষ। তানাহলে চার বছর একই জায়গায় কাজ করতে পারতাম না।

খামারি গিয়াস উদ্দিনের প্রতিবেশী এক যুবক রাহিদুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে আমরাও ভাবতাম গিয়াস ভাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে কী করতেছে। ভাইকে অনেক বোঝাতামও কিন্তু এখন আমাদের এলাকার বেকার যুবকরা ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিতে আসে। ভাই সবাইকে সব সময় ভালো পরামর্শ দেয়।

কাশিয়ানী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পৃথ্বীজ কুমার দাস বলেন, খামারিরা খামার শুরু করার সময় আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন না। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করলে তারা আরও ভালো কিছু করতে পারত। গিয়াস উদ্দিন অল্প দিনে একজন সফল খামারি হয়েছেন। আমি তার খামারে কিছু দিন আগে গিয়েছিলাম। তাকে কিছু পরামর্শ দিয়ে এসেছি। গরুর কিছু জাত উন্নয়নে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। এই জাতের গরুগুলো আনলে তিনি আরও লাভবান হবেন।

আশিক জামান/এসপি