চোখে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে সূর্যের দিকে তাকাতে বাধ্য করা হয় জাকিরকে
লক্ষ্মীপুরে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে প্লায়ার্স দিয়ে চামড়া টেনে শিশু জাকির হোসেনের (১৪) শরীরে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় চেয়ারে বেঁধেও তাকে বেদম পেটানো হয়। একপর্যায়ে হাতের আঙুলে সুই ঢুকিয়ে রক্তাক্ত জখমের পর শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা করা হয়। শিশুটির চোখে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে সূর্যের দিকে তাকাতে বাধ্য করা হয়েছে। পরে তাকে অভিযুক্তরা ৪ দিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এ বিবরণ তুলে ধরে আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বাদীর আইনজীবী মঞ্জুর আহমেদ তিতু জানায়, শিশুকে নির্যাতনের পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ৪ দিন ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আদালতের বিচারক তারেক আজিজ মামলাটি আমলে নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সদর মডেল থানা পুলিশের ওসিকে ঘটনাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (সদর) আদালতে জাকিরের বাবা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন, দেলোয়ার হোসেন, গোফরান, মনির হোসেন, মাকছুদ আলম, মো. মনির ও শাহ আলম। তারা সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চররমনী গ্রামের বাসিন্দা। বাদী আলমগীর একই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় শ্রমিক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের সঙ্গে আলমগীরের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। সেই জের ধরে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে অভিযুক্ত শাহ আলমের ঘরে ডেকে নেওয়া হয় আলমগীরের ছেলে জাকিরকে। এসময় তাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে তাকে (জাকির) বেদম পিটিয়ে প্লায়ার্স দিয়ে চামড়া টেনে শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের আগুন লাগিয়ে ছ্যাকা দেওয়া হয়। এরপর হাতের আঙুলে সুই ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। সবশেষ চোখে মরিচের গুঁড়া মেরে তাকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ সময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় ছেলেকে উদ্ধার করে আলমগীর। কিন্তু অভিযুক্তদের ভয়ে ঘর থেকে বের করে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়নি। ঘটনার ৫ দিন পর তাকে গোপনে সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আলমগীর হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা করাতেও দেয়নি। এজন্য ৪ দিন অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ছেলের কষ্ট দেখে সহ্য হচ্ছিল না। পরে গোপনে তাকে সদর হাসপাতাল ভর্তি করিয়েছি।
বক্তব্য জানতে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। মামলার বিষয় জানাজানি হওয়ার পর তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। তদন্ত শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস