অবশেষে ১১ মাস পর প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসছেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ডিসেম্বর খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।

সম্প্রতি সারাদেশে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ শেষ হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তার আর এই কর্মসূচিকে ঘিরে আলোচনায় উঠে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু কখনোই নিস্ক্রিয় নয়, তিনি সবসমই সক্রিয়। তিনি তার দলবল নিয়ে এই সমাবেশে থাকবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। সমাবেশে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের মহাসচিব গত পরশু দিন পার্টির কর্মসূচি সফলের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। দলের নেতাকর্মী এবং জনগণকে নিয়ে যেন এই কর্মসূচি সফল হয় এজন্য কাজ করতে বলেছেন। মহাসচিবের এই আহ্বান নিয়েই আমরা গত দুইদিন বৈঠক করেছি। এই বৈঠকগুলোর যে প্রস্তাবনা সেগুলো আমরা মহাসচিবকে জানিয়েছি। আজ বিকেলেই আমাদের আরেকটি বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। এটা জাতীয় সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। আমরা খুলনার নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচির বাইরে থাকব না। কমিটি গঠনসহ নেতাকর্মীরা যেসব দাবি জানিয়েছে সেই দাবিগুলোই চলমান। শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে বৈঠকে আমাদের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে যোগদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, সম্ভাবনা আছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিং করেই আমরা মহাসমাবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। আমি নিজেও প্রেস ব্রিফিংয়ে থাকব ইনশাল্লাহ।  

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের গত ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির ৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ক‌মি‌টি থেকে বাদ পড়েন নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। গত ১২ ডিসেম্বর দলের এই সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় মঞ্জুকে। ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রায় ৪৩ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এমন পরিণতি মানতে পারেননি খুলনার বিএনপি নেতারা।

নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, ৫ থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কমিটির প্রায় ৫ শতাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। দলের কর্মকাণ্ডে এখনও তারা নিষ্ক্রিয়। বর্তমান মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে তাদের কারোরই জায়গা হয়নি। ওয়ার্ডের নতুন কমিটি থেকেও বাদ পড়েছেন তারা। দলের বিপুল সংখ্যক নেতার বাইরে রেখেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বিএনপি।

সম্প্রতি সারাদেশে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে সমাবেশ শেষ হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দলের বড় একটি অংশকে বাইরে রেখে এতো বড় সমাবেশ আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলের মধ্যে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হয়েছে। তারা কথা বলেছেন স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে। সেখান থেকেও সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। 
এদিকে গত ১১ মাসে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দেখা না গেলেও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচি তিনি পালন করেছেন। তবে তার অনুসারীরা রমজানে ইফতার মাহফিলসহ বিভিন্ন সময়ে কর্মসূচি পালন করেছে।

এতোদিন কেন দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি এমন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিটি গঠনের পর ওই কমিটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিলাম। আর তখন বর্তমান কমিটির পাল্টা কোনো কর্মসূচি না করার ঘোষণাও দিয়েছিলাম। যে কারণে রাজনৈতিক পাল্টা কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। এখন দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল করতে হবে। আগামীকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।  

এমএএস