শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ এখন চায়ের দোকান!
‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ’ সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় এক সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছিল। তবে কালের পরিক্রমায় সংগঠনটি এখন চায়ের দোকানে পরিণত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি, শেখ পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সন্তানের নামে গড়ে ওঠা সংগঠনটির নামে বরাদ্দ হলেও ভাঙা ভবনের পরিবর্তে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, নামধারী কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার গাফলতির জন্যই এই পরিণতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২২ নং ওয়ার্ডের রাস্তা প্রশস্তকরণের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পােরেশনের চাহিদা অনুযায়ী স্মৃতি সংসদের ভবনটি ভাঙা হয়। এরপর থেকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের কার্যালয় নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি নগর প্রশাসন কিংবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বিজ্ঞাপন
কাজী জহির নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার হস্তক্ষেপের কারণে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। এই বিষয়ে জানতে চেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কেউ ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দিয়েছেন। আবার বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের এক নেতার এই বিষয়ে কিছুই জানা নেই বলে জানান।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের ভিত্তিপ্রস্তর ও সাইন বোর্ড বিহীন খালি জায়গায় বসেছে চায়ের দোকান। বন্দর বাজারের চা বিক্রেতা চন্দন সেখানে একটি চা ও পুরির দোকান বসিয়েছেন। তবে তার দাবি সে ভাড়ার বিনিময়ে দোকান করছেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বন্দর বাজার শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদটির নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় এখন এর অস্তিত্ব বিলুপ্তের পথে।
বন্দর উপজেলার তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারের পক্ষ থেকে চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ মেরামতের জন্য। শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি কাজী জহির (৩৯৮) স্মারকে গত ১৮/৬/১৩ ও ২০/৬/১৩ তারিখে ২ দফায় ৫ টন চাল গ্রহণ করেন। তবে বরাদ্ধ পাওয়ার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তা আজও মেরামত হয়নি। এই বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি মোজাহীদ কবীর মৃধা পিয়াস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দলীয় সভাগুলোতে বার বার বলেছি যেন ভবনটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এটি এর আগে থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল, পরে এটাকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার দখলে যাওয়ায় সেখানে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সেই নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা গণমাধ্যমে কাজ করেন। আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখেন সেটা কে এবং তার পেছনে কার হাত রয়েছে? তবে আমাদের দাবি হলো খুব দ্রত নতুন ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের এই লজ্জা ঘুচিয়ে ফেলা হোক। আমি এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আরেক যুবলীগ নেতা হিমেল খান বলেন, স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদটি এখন বিলুপ্তের পথে। শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ মেরামতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্ধ আসে কিন্তু তা ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও মেরামত হয়নি। এখন ভূমিদস্যুরা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে বরাদ্দ করা সম্পত্তি নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করছে।
বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে সেখানে ওই নামে (শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ) কোনো সংগঠন ছিল কি না সেটি তিনি জানেন না। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সেটি অবশ্যই লজ্জার ও দুঃখজনক।
এদিকে যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তার সঙ্গে যোগাযাগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আসলে জায়গা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা চলমান থাকায় সেখানে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। জায়গাটি ভুলবশত গণপূর্ত’র নামে রেকর্ড করা হয়েছে। এই জায়গাটি মূলত তিনজনের মালিকানাধীন। তারা আমাকে পাওয়ার দিয়েছেন, সেই মতে আমিই এখন ওই জায়গার মালিক। আর আমি যেহেতু মালিক সেহেতু সেই জায়গায় আমার অফিস থাকতেই পারে। তবে মামলা শেষ হলে পুনরায় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম কুদরত-এ-খুদা বলেন, ২০১৩ সালে আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। তবুও সরকারি মালামাল হরণ করার কারো অধিকার নেই। শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের নামে যদি সরকারি বরাদ্দ নিয়ে কাজ না করে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। বিষয়টি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসপি