বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে শহরের শহীদ মিনার সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদে শেখ রাসেল স্মৃতি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় মোট ৪টি ইভেন্টে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। 

রাঙ্গামাটি জেলা সদরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত প্রতিযোগীরা নৌকা ও সাম্পান নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, রাঙ্গামাটি রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন, রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
 
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে ষষ্ঠবারের মতো এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অন্যান্য বছর শুধু জেলা সদরের প্রতিযোগিরা অংশ নিলেও এবার প্রথমবারের মতো কাপ্তাই, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়িসহ অন্যান্য উপজেলা থেকে প্রতিযোগিরা অংশ নেয়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগের জন্য পরিপূর্ণ হয়ে উঠে শহীদ মিনার সংলগ্ন পুরো এলাকা।

কাপ্তাই হ্রদের মাঝামাঝি একটি দ্বীপ থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিরা তাদের নৌকা ও সাম্পান চালিয়ে সেই দ্বীপ থেকে শহীদ মিনার সংলগ্ন ঘাটের একটু আগে ফিনিশিং পয়েন্টে এসে প্রতিযোগিতা শেষ করে। দলগত মহিলা বড় নৌকা, দলগত পুরুষ বড় নৌকা, মহিলা ছোট নৌকা এবং পুরুষ সাম্পান এই চারটি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। 

যেখানে মহিলা বড় নৌকায় ১৫ জন, পুরুষ বড় নৌকায় ২১ জন, মহিলা ছোট নৌকায় ২ জন এবং পুরুষ সাম্পানে ২ জন করে প্রতিযোগি ছিলেন। 

প্রতিযোগিতায় পুরুষ সাম্পানে ১ম স্থান অর্জন করেন মো. জামাল উদ্দিন, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন জল কান্তি ত্রিপুরা এবং ৩য় স্থান অর্জন করেন মো. জিহাদ। মহিলা বড় নৌকায় ১ম স্থান অর্জন করেন চিকনা ত্রিপুরা ও তার দল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন সুমিতা ত্রিপুরা ও তার দল এবং ৩য় স্থান অর্জন করেন রচনা ত্রিপুরা ও তার দল। পুরুষ বড় নৌকায় বিজয়ী হন প্রশান্ত ত্রিপুরা ও তার দল, ২য় রোমেল কান্তি চাকমা ও তার দল এবং ৩য় শঙ্কর ত্রিপুরা ও তার দল। মহিলা ডিঙি নৌকায় ১ম হন পূর্ণ রাণী ত্রিপুরা, ২য় সুমিতা চাকমা ও ৩য় স্থান অর্জন করেন শান্তি দেবী। 

বালুখালি ইউনিয়ন থেকে আগত প্রতিযোগী শান্তিময় চাকমা বলেন, আমরা প্রতিবছরই শেখ রাসেল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। আমাদের কাছে জেতা বা হারা সেটি কোনো বড় ব্যাপার নয়। আনন্দ এবং উচ্ছাস করার জন্যই আমরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিই।

প্রতিযোগী বিভাস খীসা বলেন, আমরা ২১ জন প্রতিযোগী বড় ডিঙি নৌকা নিয়ে পুরুষ দলগত ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করছি। আমাদের লক্ষ্য প্রথম হওয়া। তবে হারি বা জিতি আনন্দটা আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি।
 
আরেক প্রতিযোগী নুরুল আলম বলেন, আমরা নানিয়ারচর থেকে ২১ জনের বড় নৌকায় অংশ নিতে এসেছি। আমরা প্রতিবছরই আসি। এই প্রতিযোগিতাটা প্রতি বছর এইভাবেই চলমান থাকুক এটাই আমাদের চাওয়া। 

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে সমানতালে। শহীদ মিনার চত্বর ও আশেপাশের সিঁড়ি ও ঘাটগুলো দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। চিৎকার ও বাঁশি বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় দর্শকদের।
 
নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শক সুবিমল খীসা বলেন, প্রতি বছরই শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে এই নৌকা বাইচটা হয়। আমি প্রতি বছরই কেইল্লামুড়া থেকে নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। খুবই আনন্দদায়ক একটা সময় কাটে।

আরেক দর্শনার্থী নিরুপা দেওয়ান বলেন, আমাদের এলাকা থেকে নৌকা এসেছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য। ওদের উৎসাহ দেওয়ার জন্যই আমরা এসেছি। আমাদের চাওয়া এটা প্রতি বছরই হোক।

মহিলা প্রতিযোগীদের কোচ শোভা চাকমা বলেন, এই প্রতিযোগিতাটা প্রতি বছর হলে আমাদের মেয়েরা উৎসাহিত হবে। কারণ মেয়েরা রাঙ্গামাটির বাইরে কোথাও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে না। এই একটা প্রতিযোগিতাই আছে আমাদের জন্য। তাই আমরা চাই এটা চলমান থাকুক। 

শেখ রাসেল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, জাতির জনকের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিনকে স্বরণীয় করার জন্য এবার ষষ্ঠবারের মতো আমরা এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছি। বাংলাদেশে আমরাই এই অনুষ্ঠানটা করে থাাকি। এটা আমাদের রাঙ্গামাটিবাসীর কাছে প্রত্যাশিত একটি ইভেন্ট হয়ে গেছে। এই ধরনের ইভেন্ট আমরা আয়োজন করে যাব।
 
প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার হিসেবে নগদ ৫০ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ৩৫ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মাঝে নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন। 

মিশু মল্লিক/এমএএস