ভাটি অঞ্চল সুনামগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা কুস্তি। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে জনপ্রিয় এই খেলা। হাওরে ধান কাটার পর প্রতি বছরই গ্রামে-গ্রামে আয়োজন করা হয় এই খেলার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল এই খেলা। তবে করোনা ও বন্যার পর আবারও প্রাণ ফিরেছে কুস্তি খেলায়। 

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এক গ্রামের সঙ্গে লড়েন অন্য গ্রামের খেলোয়াড়রা। প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও চলে এই কুস্তি খেলা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে হাজার হাজার দর্শক। উপভোগ করছেন ভাটিবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা।

দর্শক ও কুস্তি খেলোয়াড়রা জানান, কুস্তি সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। এটি আবহমানকাল থেকে নিয়মিত চলে আসছে। দাওয়াতি এই খেলার মাধ্যমে দুটি গ্রাম ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খেলা আরও জনপ্রিয় হবে।

কুস্তিগীর লিমন আহমেদ বলেন, কুস্তি সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। এটি অনেক পুরোনো খেলা। খেলায় আমরা অনেক আনন্দ পাই। দুটি গ্রামের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। 

খেলা দেখতে আসা দর্শক আমরিয়া আলম বলেন, কুস্তি খেলার নাম শুনলেই হাজার হাজার দর্শক মাঠে জড়ো হয়। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে খেলা উপভোগ করে। আমিও এসেছি রোদের মধ্যে খেলা দেখতে। আমি চাই আমাদের এই খেলাকে জাতীয়করণ করা হোক। 

আয়োজক সুলতান আহমেদ বলেন, কুস্তি ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। আগের দিনই দাওয়াতিরা চলে আসেন। আমরা তাদের আপ্যায়ন করি।

তবে এতো জনপ্রিয়তার পরও আমিনদের (রেফারি) অদক্ষতা ও অনিয়মের অভিযোগে খেলার মাঠে বিশৃঙ্খলার অভিযোগও নেহাত কম নয়। কুস্তিপ্রিয় মানুষদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এই খেলাকে যেন নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় এবং খেলা পরিচালনাকারী আমিনদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 

শিক্ষক ও ক্রীড়াবিদ অনীশ তালুকদার বাপ্পু বলেন, হাজার হাজার মানুষ কুস্তি খেলা দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষা করে। এই খেলাটি যেন সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে শেষ করতে পারেন, সেজন্য আমিনদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসলে সুনামগঞ্জের এই খেলাটি বিশ্বে সমাদৃত হবে। 

এদিকে গ্রামীণ এই খেলার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় আগামী ৩০ অক্টোবর জেলা স্টেডিয়াম মাঠে আন্তঃউপজেলা  কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুস্তি খেলা সুনামগঞ্জ অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় প্রচুর দর্শক হয়। করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর খেলাটি হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয়ভাবে খেলাটি শুরু হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে আগামী ৩০ তারিখ সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে কুস্তি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

সোহানুর রহমান সোহান/এসপি