সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ করে রেখেছে কলেজ প্রশাসন। এতে করে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন কলেজটির প্রায় ৩০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। অথচ চিকিৎসা খরচ বাবদ টাকা দিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, কলেজ প্রশাসন সচেতনভাবেই কৌশলে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধ করেছে।

যদিও কলেজ প্রশাসন বলছে, করোনার কারণে বন্ধ করা হলেও এরপর নতুন করে কোনো চিকিৎসককে নিযুক্ত করা হয়নি।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০টিরও বেশি খাত দেখিয়ে টাকা নেয় কলেজ প্রশাসন। কলেজ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থী অনুকূলে প্রতি সেশনে ২৫ টাকা করে চিকিৎসা খরচ আদায় করা হয়। বর্তমান শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হিসাবে যা বছরে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ ব্যয় করে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চিকিৎসক ও ওষুধ সরবারহের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনের কথা বলে মৌখিক নির্দেশনায় চিকিৎসকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয় দুই বছর আগে। তারপর আর কাউকে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়নি কলেজ প্রশাসন।

স্নাতকের শিক্ষার্থী বিথী রাণী সরকার বলেন, দুই বছর ধরে চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধ। অথচ চিকিৎসার খরচ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিন্তু অর্থ আদায় বন্ধ করেনি কলেজ প্রশাসন। এই দুই বছরে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। অথচ আমরা কোনোদিন ১৫ টাকারও সেবা পাই না।

আরেক শিক্ষার্থী ইমরান হোসন বলেন, আগে ডা. দেলোয়ার হোসেন ছিলেন। তিনি কলেজে আসতেন না। আমরা গিয়ে ৫০ টাকা ভিজিট দিয়ে তাকে দেখাতাম। এরপরে ডা. মনীষা চক্রবর্তী কিছুদিন ছিলেন। আর এখন কেউ নেই। দিনে দিনে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডা. মনীষা চক্রবর্তী কলেজের চিকিৎসা কেন্দ্রে বসতেন নিয়মিত। কিন্তু তাকে বাদ দিয়েছে রাজনৈতিক কারণে। কারণ তিনি বাসদের রাজনীতি করেন। এখানে চিকিৎসা করার সুযোগ পেলে তার অনুসারী বেড়ে যাবে। তাই অন্য ছাত্র সংগঠনের চাপের মুখে তাকে বাদ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলে জেনেছি।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, কলেজে যেকোনো সময় যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আমাদের সুচিকিৎসার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের চিকিৎসা কেন্দ্রটি চালু করা উচিত। আমরাতো বিনা পয়সায় চিকিৎসা চাই না। টাকা দেই। তারপরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না প্রশাসন।

সর্বশেষ দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসক ডা. মনীষা চক্রবর্তী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৫ সালে খণ্ডকালীন চিকিৎসক হিসেবে আমাকে কলেজের প্রশাসন নিযুক্ত করেছিল। সপ্তাহে ৩ দিনের চুক্তি থাকলেও আমি পাঁচদিন যেতাম। তবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমাকে ডেকে কলেজ অধ্যক্ষ চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানান। নতুন শিক্ষক পরিষদ এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হন। এরপর আমি আর কলেজে যাইনি। কিন্তু কলেজ প্রশাসন প্রতারণা করে এখনও চিকিৎসা কেন্দ্রের এবং আমার নাম সংবলিত সাইনবোর্ডটি কলেজে ঝুলিয়ে রেখেছেন। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি তুলতে না পারেন।

যদিও কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলামিন সরোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা কলেজে আসেনি। তখন চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রাখারও প্রশ্ন আসে না। এজন্য বন্ধ করা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নতুন চিকিৎসক নিযুক্ত করার আলোচনা হয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে চিকিৎসক নিযুক্ত করার। তবে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার পরে নতুন কোনো চিকিৎসক নেওয়া হয়নি। এজন্য চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। এখন নতুন করে চিকিৎসক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

এমএএস