লন্ডন-ফ্রান্সে থেকেও পুলিশের মামলায় আসামি তারা
গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় দেশের বাইরে থেকেও আসামি হয়েছেন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা। তবে পুলিশ বলছে- মামলার আসামিরা সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম জানান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন ব্যবসায়িক কাজে গত ৫ অক্টোবর লন্ডনে যান। আর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ৭ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছেন ফ্রান্সে। বর্তমানেও তারা দেশের বাইরে আছেন। তারপরও গত সোমবার (১০ অক্টোবর) গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এই দুই নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, এক নম্বর আসামি জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের নির্দেশে অন্য আসামিরা রাস্তা অবরোধ, পুলিশের ওপর হামলা তথা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন ও গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম দেশের বাইরে। অনুষ্ঠানটি জেলা বিএনপির হওয়ায় মহানগরের অনেক নেতাই সেখানে উপস্থিত হননি। কিন্তু পুলিশ হয়রানি করার জন্য তাদেরকেও আসামি করেছে। সোহরাব উদ্দিন ও নূরে আলমকে যথাক্রমে ৬ ও ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার আসামি সোহরাব উদ্দিনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ৫ অক্টোবর বাহরাইন ও পরদিন সেখান থেকে লন্ডনে যাই। এখনো সেখানেই আছি।
তিনি প্রমাণ হিসেবে তার বিমানের টিকেটের অংশ পাঠান। তবে ফ্রান্সে অবস্থানরত নূরে আলমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বলেন, মামলার আসামিরা সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে মামলার বাদী এসআই আলামিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে ওই দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নিহত নেতা-কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার গাজীপুরে সমাবেশ ও শোক মিছিলের আয়োজন করা হয়। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গাজীপুর শহরের রাজবাড়ী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের চার সদস্যসহ ৩৫ জন আহত হন। ওই দিন রাতেই গাজীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বাদী হয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ৫৪ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ এ মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য আতিক হাসান (২২), ছাত্রদল কর্মী আল আমিন (২০), শাকিল খন্দকার (২২), কাপাসিয়ার যুবদল কর্মী মাজহারুল ইসলাম (৩০), মারুফ সিকদার (৪০), কাপাসিয়ার যুবদল কর্মী মোকাদ্দেস হোসেন (৪২), আরিফ হাসান (৩০), মাহবুব আলম (২৭), খায়রুল ইসলাম (২৪), মাসুম হোসেন (২৮), নাসির উদ্দিন (৩০), মো. আশিক (২৫), এমদাদুল হক (৪৫), মহানগরের সদর থানা বিএনপির সদস্য রোহানউজ্জামান (৩২) ও কাপাসিয়া মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডালিয়া আক্তার (৩১)।
গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, সড়ক অবরোধ করে মিছিল করতে নিষেধ করলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন এবং লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠিপেটাসহ কাঁদানে গ্যাসের কয়েকটি শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
তবে গাজীপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। র্যালি অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। এরই মধ্যে পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
মামলা করে বিএনপির কর্মসূচি বন্ধ করতে পারবে না উল্লেখ করে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ রিয়াজুল হান্নান বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। হামলা মামলা করে আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন থামানো যাবে না।
শিহাব খান/আরএআর