২০০ মিটার সড়কে নাকাল ১৫ গ্রামের মানুষ
‘কয়দিন পর আমন ধান ঘরোত তুলমো। কিন্তু সমস্যা হইল রাস্তা নিয়্যা। কত আকুতি-মিনতি করোচি, তাও কায়ও হামার রাস্তা কোনা ঠিক করোছে না বাহে। রাস্তা কোনা দিন দিন সরু হওচে। এ্যালা ভাঙা রাস্তার জনতে রিকশা-ভ্যান, গাড়ি-ঘোড়া যাওছে না। আমন ধান পাকার আগোত যদি রাস্তা কোনা ঠিক না করে, হামার অনেক কষ্ট হইবে। খরচ বাড়বে।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলতলা-চিকলি কাঁচা সড়কের ভাঙা অংশ দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় এভাবে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন মধুরামপুর গ্রামের কৃষক একরামুল হক।
বিজ্ঞাপন
এবারের বন্যা মৌসুমে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ গ্রামীণ কাঁচা সড়কটির ২০০ মিটার অংশের চার ভাগের তিন ভাগ চিকলি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে আশপাশের ১৫টি গ্রামের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাঁচা সড়কটি দিয়ে আলমপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়, ভেড়াপাড়া, বড়ডাঙ্গাপাড়া, শাইলবাড়ি, দোয়ালীপাড়া, নিঠুপাড়া, মধুরামপুর, পূর্বপাড়া, ভীমপুর, বানিয়াপাড়া, বারোঘরিপাড়া, ধনিপাড়া, চিকলিপাড়া, কুজিপুকুর, শেরমস্ত গ্রামের মানুষ রিকশা, ভ্যান, ট্রাক-ট্রলি ও মাইক্রোবাসে যাতায়াত করতেন।
কিন্তু গত জুন মাসে চিকলি নদীর ভাঙনে সড়কটির মধুরামপুর গ্রামের কাছে (কাদের মাস্টারের বাড়ির পাশে) ২০০ মিটার রাস্তার চার ভাগের তিন ভাগ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে রাস্তাটি সরু হয়ে গেছে। ফলে ওই গ্রামগুলোর ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে সাড়ে ৩ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৬ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে উৎপাদিত ফসল নিয়ে তাদের তারাগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তাটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিকলি নদীতে মধুরামপুর এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার অংশের বেশির ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তাটি দিয়ে কোনো রকমে ঝুঁকি নিয়েই মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে লোকজন চলাচল করছে। রিকশা-ভ্যানগুলো কাদের মাস্টারে বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে যাত্রী ও মালামাল নামিয়ে চলে যাচ্ছে।
শুক্রবার কথা হয় ওই রাস্তায় চলাচলকারী ভেড়াপাড়া গ্রামের গৃহবধূ খাদিজা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তা ভাঙি নদীত চলি গেইছে। এ্যালা আর এদি ভ্যান গাড়ি চলে না। হামাক হাটি যাওয়া আইসা করা নাগে। ভাঙার মাথা পর্যন্ত অনুরোধ করি, ভ্যান নিয়ে আসলে আগের থাকি ভাড়াও বেশি দ্যাওয়া নাগে।
মধুরারপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষক ইসমাইল হোসেন। প্রতিদিন ওই ভাঙা রাস্তা ধরে হাটবাজারে যাতায়াত করেন তিনি। চোখের সামনে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল দেখে রাস্তার ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে বহুবার বলেছেন তিনি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া এখন পর্যন্ত কেউ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াতে ক্ষুব্ধ এই কৃষক। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, হামার এ্যালা দাম নাই বাহে। কায়ও হামার কথা শুনিবার চায় না। চেয়ারম্যান মেম্বারোক কয়া কোনো লাভ নাই। ওমরা খালি হইবে হইবে, কিন্তু রাস্তার কোনো কামে হয় না। উল্টা রাস্তা কোনা ভাঙতে ভাঙতে নদীত চলি যাওছে।
মধুরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, রাস্তা সরু হয়ে আসাতে চলাচল করা এখন কষ্টের। কিছু দিন আগে ভাঙা রাস্তায় পড়ে আমার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। বৃষ্টি হলে এই রাস্তাটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তখন দুশ্চিন্তায় থাকি।
নদীতে রাস্তা ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে জানান ওই শিক্ষক।
তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন বলেন, রাস্তাটি নদীতে ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছিল। কিছু দিন আগেও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, চিকলি নদীর ভাঙনগুলো দেখতে সরেজমিনে গিয়েছিলাম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিকল্পনা করা হচ্ছে কীভাবে দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি