পটুয়াখালী লঞ্চঘাট একসময় যাত্রী ও মালামালে ভরপুর থাকলেও সেই দৃশ্যপট এখন আর দেখা যায় না। যাত্রী সংকটের পাশাপাশি মালামাল আনা নেওয়া থেকে বিমুখ হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ঘাট শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন- অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও পণ্য বিতরণে বিলম্ব হওয়ার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধিসহ ঘাট শ্রমিকদের সেবার মান নিয়ে নানা জটিলতায় লঞ্চে করে মালামাল কম আসছে। ঢাকা ও পটুয়াখালী এই দুই ঘাটের শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। 

ঘাট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী খরায় আগের মতো কাজ নেই।‌ যেখানে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা উপার্জন হতো সেখানে ৫০০ টাকাও উপার্জন করতে পারছেন না শ্রমিকরা। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব শ্রমিকদের। তাই কেউ কেউ বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন। 

লাউকাঠি ইউনিয়নের ঘাট শ্রমিক সেলিম সিকদার বলেন, ঢাকার ঘাট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ফলে ব্যবসায়ীরা লঞ্চে করে পণ্য পরিবহন করছেন না। এতে আমরা কষ্টে কঠিন সময় পার করছি। সকাল ৬টার সময় ঘাটে আসলে সকাল ৬টার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যায়। কারণ লঞ্চে এখন মালামাল কম আসে। এতে আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকার ঘাট শ্রমিকরা যদি টাকা কমিয়ে রাখেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা লঞ্চে করে মালামাল আনা নেওয়া করতেন।

পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের ঘাট সরদার আবু বকর বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময় চিন্তা করেন যত কম খরচে মালামাল ঢাকা থেকে আনতে পারেন। সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে আনলে খরচ কম পড়ে। আর তারা লঞ্চে করে মালামাল আনলে বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে বেশি পড়ে। এজন্য তারা লঞ্চে করে মালামাল আনতে চান না। যদি ঢাকার শ্রমিকরা কম টাকায় এই মালগুলো আনার ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমাদের এই পটুয়াখালী ঘাটে মালামালগুলো বেশি আসবে। এতে করে আমাদেরও ভালো হয়, আর ঢাকার ঘাটের শ্রমিকদেরও ভালো হয়।

ঘাট শ্রমিক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই ঘাটের সঙ্গে যুক্ত। অন্য কোনো কাজ শিখি নাই, পারিও না। এই ঘাট থেকে যা আয় করি সেটা দিয়ে পরিবার নিয়ে চলি। বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। আগে ঢাকা থেকে লঞ্চে অনেক মালামাল আসতো, সারাদিন লাগতো সেই মালামাল পৌঁছে দিতে। এখন এক ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক পথে মালামাল আনছেন ব্যবসায়ীরা। শতাধিক শ্রমিক পটুয়াখালী লঞ্চঘাটে কাজ করেন। এ রকম যদি চলতে থাকে তাহলে এই শ্রমিকদের সামনের দিনগুলো অনেক কষ্টে পার করতে হবে।

আল মদিনা প্রিন্টার্সের মালিক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লঞ্চে মালামাল কম আসার কারণ হলো খরচটা বেশি পড়ে যায়। ঢাকার ঘাট থেকে খরচ দিতে হয় আবার পটুয়াখালী ঘাটে খরচ দিয়ে মাল নিতে হয়। এতে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। আর কুরিয়ারে আনলে খরচ অনেক কম পড়ে, মালামাল খুব সহজে ও সময় মতো পাওয়া যায়। অনেক সময় এখানে মাল আসলে নিজের আসতে হয়,
দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ কারণেই বেশিরভাগ সময় মালামালগুলো কুরিয়ারে আনি।

পটুয়াখালীর স্টাইল কর্নারের ম্যানেজার মো. রুবেল বলেন, আমরা ঢাকা থেকে মাল কুরিয়ারে বুকিং দিই। সরাসরি মাল একদিনের মধ্যেই আমাদের দোকানে এসে পৌঁছায়। এতে‌ করে খরচও কম লাগে। লঞ্চে খরচ বেশি পড়ে, লেবার খরচ দিতে হয়, লঞ্চ ভাড়া দিতে হয়। সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়ে যায়। এজন্য আমরা লঞ্চে মাল আনি না।

মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর