হাসপাতাল চত্বরে সন্তান প্রসব করলেন ফিরিয়ে দেওয়া প্রসূতি
রংপুরের কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেছেন রিতু আক্তার (২০) নামে এক নারী। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে ওই নারী প্রসব ব্যথা সইতে না পেরে স্বজনদের সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করার সময় কমপ্লেক্স চত্বরেই সন্তান প্রসব করেন রিতু আক্তার।
বিজ্ঞাপন
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে সন্তান জন্ম দেওয়ার একটি ছবি বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অবহেলা রয়েছে বলে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই মা ও নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, কাউনিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা পীরগাছার অন্নদানগর চালনিরপাড় গ্রামের সাগর মিয়ার স্ত্রী রিতু আক্তার শুক্রবার দুপুরে প্রসব ব্যথা নিয়ে পরিবারের লোকজনসহ কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেখানকার চিকিৎসক ও নার্সরা ওই নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর গর্ভের সন্তানের অবস্থান উল্টো দিকে বলে স্বজনদের জানান এবং দ্রুত তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
রোগীর স্বজনরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে ওই নারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রাস্তার ধারে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সেখানে ভর্তি করে নেয়। বর্তমানে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ওই মা ও নবজাতকের চিকিৎসা চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাহেদ সাব্বির আহমেদ জানান, ওই নারীর গর্ভে সন্তানের অবস্থা বেগতিক ছিল। তারা বাড়িতে সন্তান প্রসবের চেষ্টাও করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে পরে হাসপাতালে আসে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গর্ভবতী মায়ের মঙ্গলের স্বার্থে রংপুরে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছি। এরই মধ্যে হাসপাতাল চত্বরে সন্তান প্রসবের ঘটনাটি ঘটেছে। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনের অবস্থা ভালো রয়েছে।
তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স ঠিক মতো রোগীকে দেখেননি। এই রোগীর ডেলিভারি এখানে হবে না জানিয়ে তারা রোগীকে রংপুরে নিয়ে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে রোগীকে রংপুর নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে থাকার সময়ে হাসপাতাল চত্বরেই বাচ্চা প্রসব হয়।
হাসপাতালে আসা অনেকেই বলেন, চিকিৎসক ও নার্সরা চেষ্টা করলে রাস্তায় সন্তান জন্মের ঘটনা ঘটতো না। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলা রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি শুনার পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ওই মা ও শিশুকে বর্তমানে মহিলা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তারা দুজনই সুস্থ আছেন। এ ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলা নয়, অদক্ষতাকে দায়ী করেন তিনি। নার্সদের কোনো গাফিলতি থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর