গৃহিণী থেকে নীলফামারীর প্রথম নারী মেয়র
গৃহিণী থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন রাফিকা আকতার জাহান বেবী। পঞ্চম ধাপে রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৮ হাজার ২৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে নীলফামারী জেলার প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হলেন রাফিকা।
রাফিকা আকতার জাহান বেবী সৈয়দপুর পৌরসভার নতুন বাবুপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি পেশায় গৃহিণী। তার স্বামী প্রয়াত আখতার হোসেন বাদল ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র।
বিজ্ঞাপন
সৈয়দপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রাফিকা আকতার জাহান বেবীকে মনোনয়ন দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভোটের দুইদিন আগে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ফলে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী তফসিল অনুযায়ী রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
নবনির্বাচিত মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী বলেন, সৈয়দপুর পৌরবাসী আমাকে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রশিদুল হক সরকার (ধানের শীষ) পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৭৫ ভোট। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৩৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ নুরুল হুদা (হাতপাখা) পেয়েছেন ১ হাজার ৮৪৩ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল আলম রবি (মোবাইল ফোন) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৮৯২ ভোট।
সৈয়দপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ৯৩ হাজার ৮৯৩ জন। পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ৪১টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রার্থী এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোট বর্জন, ফলাফল প্রত্যাখ্যান
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্র দখল, ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রদানে বাধা দেওয়াহ নানা অভিযোগে ভোট বর্জন করে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম। এর কিছুক্ষণ পরই ভোট প্রদানে অনিয়মের নানা অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী হাফেজ নুরুল হুদা।
নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় বিএনপি। রোববার সন্ধ্যায় সৈয়দপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল গফুর সরকার সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী রশিদুল হক সরকারসহ বিএনপি নেতা অ্যাড. এস এম ওবায়দুর রহমান, কাজী একরামুল হক, শফিকুল ইসলাম জনি, আব্দুল খালেক, গজনফর আলী মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেছেন। তারা হলেন-আবিদ হোসেন (গাজর), মো. সালাম রেজা (পাঞ্জাবি). মো. কালাম (টেবিল ল্যাম্প), ইমতিয়াজ আহমেদ (ডালিম)। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছয় প্রার্থীর মধ্যে ভোট বর্জন করেছেন চারজন। তারা হলেন- তারিক আজিজ (পানির বোতল), পারভেজ আক্তার খান (ডালিম), পারুল বেগম (গাজর) এবং আসলাম বুদু (পাঞ্জাবি)।
তাদের অভিযোগ, ওই দুই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন।
নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত
পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুইজন আহত হয়েছেন। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম ছোটন অধিকারী (৫১)। তিনি শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত নিতাই অধিকারীর ছেলে। নিহত ছোটন কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম রয়েলের সমর্থক ছিলেন।
মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এসপি