ইলিশ তো বড়লোকদের খাবার, শেষ কবে খেয়েছি মনে করতে পারি না
বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম। থাকেন কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সরকারি ওয়াপদায়। ছেলেরা দেখেন না। তাই দীর্ঘ দিন ধরে একা বসবাস করেন। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে দিন কাটে তার।
জানা গেছে, ধান কাটা শেষ হলে জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধান কুড়িয়ে, বাগানে জন্ম নেওয়া কচুশাক, থানকুনিসহ অন্যান্য শাকসবজি খেয়ে বেঁচে আছেন। মাছ, মাংস তার কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার। কুরবানির ঈদ এলে ভাগ্যে জোটে কয়েক টুকরো মাংস। আবার সাধ থাকলেও ইলিশ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তার। শেষ কত বছর আগে ইলিশ খেয়েছেন, সেটা মনে করতে পারেন না সুফিয়া বেগম।
বিজ্ঞাপন
সুফিয়া বেগম (৬৫) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার গোনালী কপোতাক্ষ খেয়াঘাট এলাকার তমেজ মোড়লের স্ত্রী। পার্শ্ববর্তী সরকারি ওয়াপদার বাসিন্দা। স্বামী তমেজ মোড়ল বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না।
সুফিয়া বেগমের প্রতিবেশীরা জানান, অনেক বছর ধরে সুফিয়া এখানে বসবাস করেন। ধানের মৌসুমে পার্শ্ববর্তী বিল থেকে ধান কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। টাকার অভাবে বাগানে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন শাকসবজি রান্না করে খেয়ে দিন চলে তার। আশপাশের প্রতিবেশীরা ভালো রান্না করলে সুফিয়াকে দেয় সেটা।
সুফিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুই ছেলে আছে। তারা তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকে। আমাকে দেখে না, কখনো খোঁজ নেয় না। দীর্ঘ বছর ধরে সরকারি ওয়াপদায় বসবাস করি। বয়সের ভারে এখন আর অন্যের জমিতে কাজ করতে পারি না, এমন কি কেউ কাজেও নিতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, ধানের মৌসুমে জমির মালিকরা ধান তুলে নেওয়ার পরে অবশিষ্ট যে ধান পড়ে থাকে, সেটা কুড়িয়ে জমা করে রাখি। সারা বছর অল্প অল্প করে সেটা খায়। তরকারি কিনতে না পারায় বিভিন্ন বাগান থেকে শাকসবজি জোগাড় করে সেটা রান্না করি। কুরবানির ঈদে বছরে একবার মাংস জোটে কপালে। তাছাড়া মাংস খেতে পারি না। মাছও কিনে খেতে পারি না। আর ইলিশ মাছ সে তো বড়লোকদের খাবার। সর্বশেষ কত বছর আগে ইলিশ মাছ খেয়েছি, সেটা মনে করতে পারি না।
সুফিয়া বেগম আরও বলেন, ইলিশ মাছ, মাংস খেতে ইচ্ছা হয়, তবে সামর্থ্য না থাকায় কিনতে পারি না। তাছাড়া সরকার থেকে কোনো বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়নি।
খলিলনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বাবলু বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। যদি তার বয়স্ক ভাতার কার্ড না থাকে, তবে তাকে সেটা করে দেওয়া হবে। তাছাড়া তাকে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে স্বেচ্ছাসেবী পাঠানো হবে। তাছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখার জন্য আইনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে বিষয়টি নিয়ে তার সন্তানদের সঙ্গে আলাপ করা হবে। তাছাড়া সুফিয়া বেগমকে সবভাবে সাপোর্ট দেওয়া হবে।
এসপি