শিক্ষার কোনো বয়স নেই। এমন বাণী হাদিসেও এসেছে যে ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত বিদ্যার্জন করো’। ৬৭ বছর বয়সে নিজের শেষ ইচ্ছা পূরণে জীবনের শেষ দিকে এসেও তিনি বসতে যাচ্ছেন পরীক্ষার আসনে। ছেলেরা শিক্ষক-ইঞ্জিনিয়ার হলেও স্কুল বেঞ্চে বসে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন তাদের বাবা। এই বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে এমন ঘটনায় এলাকায় চলছে তুমুল আলোচনা।

৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদীর খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। এক সময় পরিবারের অভাবে কারণে নিজে পড়ালেখা করতে না পারলেও তিন ছেলেকে বানিয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত। বড় ছেলেকে শিক্ষক, মেঝো ছেলেকে কামিল পাস ও ছোট ছেলেকে বানিয়েছেন প্রকৌশলী। তার এমন আগ্রহে পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার তরুণরা।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় অভাবের কারণে পড়তে পারেননি। পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল তাকে। তাই তিনি ঢাকায় চলে যান। এখানে এসেও পড়ালেখা করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তারপর ঢাকা থেকে তিনি সৌদি আরব চলে যান। সেখানে থাকেন দীর্ঘ ১৮ বছর। বাড়ি ফিরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করেন লেখালেখি। ইতোমধ্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাঁচটি কবিতা লিখেছি। আমি চাই আমার লেখা কবিতা যেন প্রধানমন্ত্রী হাতে পৌঁছায়।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি শিক্ষিত হবেন। এ কারণে শেষ বয়সে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেন পড়ালেখা। এবার তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

নতুন করে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কালাম বলেন, এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আর কেউ এমন করে না। আর শিক্ষার কোনো বয়স নেই। মহানবী (সা.) শিক্ষা গ্রহণের সুদূর চীন দেশে যেতে হলেও যেতে বলেছেন। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চাই।

কালামের মেঝো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবা সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এ কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে পারেননি। শেষ বয়সে তার চাওয়া পূরণ করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। আমার বাবা এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার গান, কবিতা ও ছাড়া লিখেছেন।

প্রতিবেশী তরুণ রকিব বলেন, আমরা তরুণ বয়সেও পড়ালেখা করতেই চাই না। আর কামাল দাদা বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার মাধ্যমে আমরাও পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হবো।

লাল মিয়া নামে আরেকজন বলেন, আমরা তো খুব খুশি আমাদের চাচা শেষ বয়সে পড়ালেখা করছেন। তার কবিতাও আমরা তার কাছ থেকে শুনি। খুব ভালো লাগে কবিতাগুলো।

এ বিষয়ে খড়িয়াকাজীরচর ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে লেখা কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ। গ্রামে তিনি কবি কালাম নামে অধিক পরিচিত। আবুল কালাম আজাদ এই বয়সে এসে ধৈর্যের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন এ কারণে আমরা খুশি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রহুল আলম তালুকদার বলেন, আবুল কালাম আজাদ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার কোনো বয়স নেই। তবে এ ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত তিনটি বই রচনা করেছেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

এমএএস